মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদানের খাতিরে কৃষক বন্ধু প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছিল। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নের নিশ্চিত করার খাতিরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পটি কার্যকর করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সমগ্র রাজ্যের প্রচুর সংখ্যক কৃষকের এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন এবং আগামী দিনে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব বলেই মনে করছেন রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের কর্তা ব্যক্তিরা।
কৃষক বন্ধু প্রকল্প কি?
পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী কৃষকরা বহু ক্ষেত্রেই কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক সহ নানাবিধ যন্ত্রাদি কিনতে গিয়ে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন এবং ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর কৃষকদের এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের তরফে কৃষক বন্ধু প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী কৃষকরা তাদের জমির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক বছর ৪,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান পেয়ে থাকেন। যদিও এই অনুদান দুটি কিস্তিতে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, সমস্ত কৃষকদের এক একরের তুলনায় কম জমি রয়েছে তারা প্রত্যেক বছর ৪০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
অন্যদিকে যে সমস্ত কৃষকদের ১ একরের তুলনায় বেশি জমির রয়েছে তারা প্রত্যেক বছর ১০,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকে। শুধু তাই নয় রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আরো একটি অংশ রয়েছে যেটি কৃষক বন্ধু ডেথ বেনিফিট নামেই বিশেষ পরিচিত। এক্ষেত্রে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতাধীন ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সী কোনো কৃষকের মৃত্যু ঘটলে তার পরিবার অথবা আইনসম্মত উত্তরাধিকারীকে ২ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলত কৃষকের মৃত্যুর পর তার পরিবার এবং সন্তানদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে এই বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, এমনটাই জানা গিয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে।
কারা কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?
১. রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ১৮ বছর থেকে ৫৯ বছর বয়সী কৃষকরা এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্তকরণের ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকেন।
২. কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী কৃষকরা এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
৩. একই পরিবারের একাধিক সদস্যের যদি নিজস্ব চাষযোগ্য জমি থেকে থাকে তবে উক্ত পরিবারের যে সমস্ত সদস্যের নিজস্ব জমি রয়েছে তারা প্রত্যেকে এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
৪. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী যোজনার অধীনে যে সমস্ত কৃষকের নাম নথিভুক্ত রয়েছে তারাও এই প্রকল্পের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন।
৫. কেন্দ্রীয় সরকার অথবা রাজ্য সরকারের অধীনে কর্মরত যেকোনো কর্মচারীর যদি নিজস্ব চাষযোগ্য জমি থেকে থাকে তবে তিনি এই প্রকল্পের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:- ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করলে কোন কোন ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে, জেনে নিন।
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের অধীনে আবেদন জানাবেন কিভাবে?
কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যেকোনো কৃষককে তার বাড়ির নিকটবর্তী কৃষি অফিস থেকে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের অধীনে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর এই ফর্মে আবেদনকারীর নাম, গ্রামের নাম, গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম, পোস্ট অফিস, ব্লক, পুলিশ স্টেশন, জেলা, পিন কোড, পিতা অথবা স্বামীর নাম, জন্ম তারিখ, আধার নম্বর, ভোটার নম্বর সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
পরবর্তীতে আবেদনকারীর জমির খতিয়ান নম্বর, J.L. No., কত পরিমাণ জমি রয়েছে, জমিটি কোন মৌজা, ব্লক এবং ডিস্ট্রিকে অবস্থিত তা সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো আবেদনকারীর একাধিক জমি থাকলে তিনি প্রত্যেকটি জমির জন্য পৃথক পৃথক তথ্য উল্লেখ করবেন। এরপর আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, আইএফএসসি কোড, ব্যাংকের ব্রাঞ্চের নাম সহ ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত প্রকার তথ্য এবং ফর্মে উল্লেখিত অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হবে, তাহলেই ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। এরপর রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী সেলফ ডিক্লারেশন ফর্ম এবং আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিগুলি সঠিকভাবে আবেদন পত্রের সঙ্গে অ্যাটাচ করতে হবে এবং কৃষি অফিসে গিয়ে জমা করতে হবে, তাহলেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।
অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য জানা গিয়েছে যে, রাজ্যের কৃষকরা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমেও কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রেও কৃষকদের দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে এবং উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে, এরপর প্রয়োজনীয় নথি সহকারে ফর্মটি ক্যাম্পে জমা দিলে এই প্রকল্পের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. আধার কার্ড
২. ভোটার কার্ড
৩. জমির পর্চা কিংবা দলিল অথবা বর্গা রেকর্ড
৪. আবেদনকারীর ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত প্রথম পৃষ্ঠার জেরক্স কপি।
৫. সিল্ক ডিক্লারেশন ফর্ম।
৬. যে সমস্ত ব্যক্তিদের জমি নিজের নামে নেই তাদের ক্ষেত্রে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট।