আবেদন করুন সক্ষম স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান বার্ষিক ৫০ হাজার টাকার অনুদান।

প্রাচীনকাল থেকেই সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের পরিবারের বোঝা মনে করা হয়ে থাকে। এমনকি এই সমস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা কিংবা শিক্ষা নিয়েও পরিবারের বিশেষ একটা মাথাব্যথা থাকে না। যার কারণে ভারতীয় নাগরিকদের একটা বড় অংশ সমাজের অন্য অংশের তুলনায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। আর তাই বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সক্ষম স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে। এই স্কলারশিপের আওতায় বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজ ফি, থেকে শুরু করে বই, খাতা, পেন এমনকি কম্পিউটার কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পর্যন্ত প্রদান করা হয়ে থাকে।

ছাত্র-ছাত্রীরা সক্ষম স্কলারশিপের অধীনে কি কি সুবিধা পাবেন:-

এই স্কলারশিপের আওতাভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের কলেজ ফি, কোর্সের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বইপত্র সহ অন্যান্য শিক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং কম্পিউটার কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকার বার্ষিক অনুদান পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্ধারিত কোর্সের প্রথম বর্ষে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা সর্বোচ্চ ৪ বছরের জন্য এই স্কলারশিপের সুবিধা পাবেন এবং দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য এই স্কলারশিপের সুবিধা পাবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যান্য স্কলারশিপের মতোই এই স্কলারশিপের টাকাও প্রত্যেক বছর ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়ে থাকে। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছর অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে রিনিউয়াল করা প্রয়োজন। নতুবা কোনভাবেই প্রতিবছর এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাওয়া সম্ভব নয়।

সক্ষম স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা কি কি?

১. ভারতে বসবাসকারী বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্র-ছাত্রীরা কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ৪০ শতাংশ কিংবা তার বেশি শতাংশ প্রতিবন্ধী তারাই কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
২. AICTE অ্যাপ্রুভড যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় ডিগ্রি কোর্সের অধীনে প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে।
৩. সক্ষম স্কলারশিপের অধীনে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র-ছাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয় ৮ লাখ টাকা বা তার কম হতে হবে হতে হবে।
৪. কোন ছাত্র বা ছাত্রী যদি কোনো ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করে বা কোন কারণে পরীক্ষাটি না দিতে পারে, তবে উক্ত ছাত্র বা ছাত্রী আগামী দিনে এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাবেন না।
৫. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী অন্য যেকোনো স্কলারশিপের আওতায় যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা অনুদান পেয়ে থাকেন, তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন না।

আরও পড়ুন:- অটল পেনশন যোজনায় আবেদন করলেই প্রতি মাসে মিলবে সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকার পেনশন।

কিভাবে সক্ষম স্কলারশিপের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করবেন?

বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী ন্যাশানাল স্কলারশিপ পোর্টালের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের বাড়িতে বসেই সক্ষম স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এক্ষেত্রে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই ন্যাশনাল স্কলার্শিপ পোর্টাল https://scholarships.gov.in/ -এ যেতে হবে। এরপর হোম পেইজে থাকা Applicant Corner অপশনের আওতাধীন NEW REGISTRATION অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তীতে যে আপনার সামনে CLICK HERE FOR SCHOLARSHIP SCHEMES HOSTED ON NSP FOR AY 2022-23 নামক একটি অপশন আসবে, এই অপশনটিতে আপনাকে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তীতে আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে আপনি স্কলারশিপ সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য পেয়ে যাবেন। এরপর এই পেজের নিচের দিকে থাকা Continue অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে আসার রেজিস্ট্রেশনের ফর্মটিতে সকল প্রকার তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন।

রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে আপনাকে আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আপনাকে স্কলারশিপের সমস্ত তথ্য উল্লেখিত পেজটিতে যেতে হবে এবং Login to Apply অপশনে ক্লিক করে নিজের অ্যাপ্লিকেশন আইডি, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা কোডটি সঠিকভাবে লিখে SUBMIT অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে আসা OTP টির মাধ্যমে OTP ভালিডেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন এবং লগইনের প্রক্রিয়াটিও সম্পূর্ণ করুন। তারপর আপনাকে এই পোর্টালের তরফে যে পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছিল সেটি পরিবর্তন করে নিজের পছন্দ অনুসারে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করুন।

পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হলে পেজটিকে Applicant’s Dashboard নামক একটি পেজে রিডাইরেক্ট করা হবে। ওই পেজের বাঁদিকে থাকা অপশনগুলির মধ্যে থেকে Application Form অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পিতার নাম, গ্রাম বা শহর, জেলা, রাজ্য, পুলিশ স্টেশন, পিন কোড সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রকার তথ্য নির্ভুলভাবে প্রদান করুন এবং ফর্মে উল্লিখিত সমস্ত নথি সঠিকভাবে আপলোড করুন। সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হলে এবং সমস্ত নথি সঠিকভাবে আপলোড করা হলে ফর্মটি সাবমিট করুন তাহলেই আপনার আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট:-

১. আবেদনকারীর আধার কার্ড।
২. মাধ্যমিক কিংবা দশম শ্রেণীর পরীক্ষার মার্কশীট ও সার্টিফিকেট।
৩. উচ্চমাধ্যমিকে কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট।
৪. ITI সার্টিফিকেট ও মার্কশিট (যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছে তাদের জন্য আবশ্যক)।
৫. ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট ও মার্কশিট (যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে ডিগ্রী কোর্সে ভর্তি হয়েছে তাদের জন্য আবশ্যক)।
৬. কাস্ট সার্টিফিকেট।
৭. Bonafide Certificate
৮. পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
৯. প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট।
১০. ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত ডকুমেন্টস।

Leave a Comment