পশ্চিমবঙ্গের যুবক-যুবতীদর স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প, যোজনা, স্কিম লঞ্চ করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী বেকার, কর্মহীন যুবক-যুবতীরা এই সমস্ত প্রকল্পের মাধ্যমে নিজের উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন এমনটাই আশা করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে। রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীরা যাতে নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারেন এবং পরবর্তীতে নিজের ব্যবসার মাধ্যমে রাজ্যের অন্যান্য যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান করে দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন তা নিশ্চিত করাই রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই সমস্ত প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এমনই একটি বিশেষ প্রকল্প হল কর্ম সাথী প্রকল্প। এই কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যুবক-যুবতীরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকার ঋণ পেয়ে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতানুসারে কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ১ লক্ষ যুবক স্বনির্ভর হতে পারবেন। সুতরাং আপনিও যদি নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু বিনিয়োগের অভাবে তা করতে পারছেন না, তবে আজই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কার্যকরী কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানান।
কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় আপনি কি কি সুবিধা পাবেন:-
রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ যুবক-যুবতী কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকার ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। যে সমস্ত যুবক-যুবতীরা কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় ঋণ গ্রহণ করবেন তাদের রাজ্য সরকারের তরফে ১৫ শতাংশ সাবসিডি দেওয়া হবে। তবে রাজ্যের যুবক-যুবতীরা কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সাবসিডি পেয়ে যাবেন বলেই জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকায়। এর পাশাপাশি আরো জানানো হয়েছে যে, যে সমস্ত যুবক-যুবতীরা ৩ বছরের মধ্যে ঋণের টাকা শোধ করে দেবেন তাদের ব্যাংকের তরফে সুদের ওপর ৫০ শতাংশ সাবসিডি দেওয়া হবে। অন্যদিকে যে সমস্ত যুবকেরা ৩ বছরের বেশি সময় নিয়ে ঋণের টাকা শোধ করবেন তাদের ক্ষেত্রে সুদের ওপর ৪০ শতাংশ সাবসিডি দেওয়া হবে ব্যাংকের তরফে।
কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে আপনাকে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে?
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরকে প্রকাশিত নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে যে, কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় ৫০,০০০ টাকার কম অংকের প্রজেক্ট শুরু করতে চাইলে আপনাকে ৫% টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে ৫০০০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি অংকের প্রজেক্ট লঞ্চ করতে চাইলে আপনাকে ১০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ব্যক্তি, মহিলা, সংখ্যালঘু শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ছাড় পাবেন। অর্থাৎ ৫০০০০ টাকা বা তার বেশি টাকার প্রোজেক্টের ক্ষেত্রেও তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ব্যক্তি, মহিলা, সংখ্যালঘু শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৫ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন:- বাড়িতে বসেই ডাউনলোড করুন জমির পর্চা। বিস্তারিত পদ্ধতি জেনে নিন।
কারা কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন?
১. পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী যেকোনো পরিবারের একজন ব্যক্তি এই কর্ম সাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে একই পরিবারের একের অধিক ব্যক্তি কোনভাবেই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না।
২. কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছর পর্যন্ত হতে হবে ৫০ বছরের তুলনায় বেশি বয়সী ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের আওতায় কোনরকম সুবিধা পাবেন না।
৩. কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন -এর ক্ষেত্রে আপনাকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে হবে।
৪. পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বেকার ও কর্মহীন যুবক-যুবতী রাই কেবলমাত্র কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৫. যেসকল যুবক-যুবতীদের নাম এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের অধীনে নথিভুক্ত রয়েছে তারাই এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করবেন কিভাবে?
কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের জন্য আপনাকে প্রথমেই রাজ্য সরকারি তরফে কার্যকরী কর্মসূচি প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://karmasathi.wb.gov.in/ -এ যেতে হবে। এরপর হোম পেইজে থাকা NOTICE এর আওতাধীন Gazette Notification of Karma Sathi Prakalpa অপশনে ক্লিক করুন। উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইলে একটি পিডিএফ ডাউনলোড হয়ে যাবে। এই pdf -এর শুরুতেই আপনি কর্ম সাথী প্রকল্প সম্পর্কিত নানা ধরনের তথ্য দেখতে পারবেন, তবে পিডিএফটির একেবারে শেষে আপনি কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি পেয়ে যাবেন। এরপর ফর্মটিকে সঠিকভাবে পূরণ করে নিতে হবে এবং উল্লিখিত সমস্ত নথি সহকারে BDO অফিস, SDO অফিস কিংবা KMC অফিসে জমা দিতে হবে। গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিরা কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি BDO অফিসে জমা করবেন, অন্যদিকে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিরা ফর্মের সাথে প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আবেদন পত্রটি সমস্ত নথি সহকারে SDO অফিসে জমা করবেন। এর পাশাপাশি আরো জানিয়ে রাখি যে, কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের আওতাধীন ব্যক্তিরা KMC -এর অফিসে গিয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি সহকারে এই প্রকল্পের ফর্মটি জমা করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফর্মটি জমা করার পর আপনার সমস্ত তথ্য এবং নথিগুলির ভেরিফিকেশন করা হবে। সমস্ত তথ্য এবং ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে একটি মেসেজ আসবে যাতে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট দিনে BDO অফিস কিংবা SDO অফিস অথবা KMC -এর অফিসে উপস্থিত হতে বলা হবে। এরপর আপনাকে একটি নির্দিষ্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংকে পাঠানো হবে এবং সেখানে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেওয়া হবে অথবা উক্ত অফিসের কর্মকর্তাদের তরফে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংকের আওতায় ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে ওই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের একাউন্টে কর্ম সাথী প্রকল্পের টাকা দেওয়া হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে কি কি নথি প্রয়োজন হবে?
আবেদনকারীর ফটো আইডেন্টিটি প্রুফ
ঠিকানার প্রমাণপত্র
বয়সের প্রমাণপত্র
শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
কাস্ট সার্টিফিকেট
প্রজেক্ট রিপোর্ট (আপনি যে ব্যবসাটি করতে চাইছেন তা সংক্রান্ত সমস্ত ধরনের তথ্য এবং বাজেট উল্লেখ করে একটি প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। আপনি কর্ম সাথী প্রকল্পের আওতায় অনুদানের টাকা পাবেন কিনা তা অনেকাংশেই নির্ভর করে এই প্রজেক্ট রিপোর্টের উপরে।)
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই কর্ম সাথী প্রকল্প বিশেষ প্রশংসার দাবিদার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন বেকারত্বের সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে অন্যদিকে ঠিক তেমনভাবেই রাজ্যব্যাপী যুবক-যুবতীদের ব্যবসা ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ক্ষেত্রের কর্তা ব্যক্তিরা।