সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শারীরিক কিংবা মানসিক সমস্যার কারণে রাজ্য সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবারের অতিরিক্ত বোঝা মনে করা হয়। যার কারণে বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সমাজের সমস্ত সুযোগ সুবিধা পান না। এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দারিদ্রতার কারণে শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের ন্যূনতম চিকিৎসা এবং পুষ্টিকর খাদ্যটুকু পান না। বহু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিবারের আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে সঠিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন না, যার ফলস্বরূপ তারা বরাবরই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেন।
আর তাতেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এই সমস্ত শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে মানবিক পেনশন প্রকল্প বা মানবিক ভাতা কার্যকর করা হয়েছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যান্য প্রকল্পগুলির মতই মানবিক পেনশন প্রকল্পের আবেদনের ক্ষেত্রেও বেশ কতগুলি শর্ত আরোপ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্ত শর্তগুলির আবশ্যিক যোগ্যতা এবং আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে না জানার কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারেন না। ফলত আজকের এই পোস্টে আমরা রাজ্যবাসীর এই সমস্যার সমাধান নিয়ে উপস্থিত হয়েছি।
কারা মানবিক পেনশন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন:-
১. রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে সমস্ত ব্যক্তিরা ৪০ শতাংশ বা তার তুলনায় বেশি প্রতিবন্ধকতার শিকার তারা রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী মানবিক পেনশন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
২. পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী নাগরিকরাই কেবলমাত্র এই প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। অর্থাৎ মানবিক পেনশন প্রকল্পের অধীনে আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
মানবিক পেনশন প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন?
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, মানবিক পেনশন প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রত্যেক মাসে ১ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী প্রায় ২ লক্ষ প্রতিবন্ধী নাগরিক মানবিক পেনশন প্রকল্পের আওতায় অনুদানের টাকা পেয়ে থাকেন। ২০১৮ সালের কার্যকরী এই প্রকল্পের পেনশনের টাকা সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়ে থাকে।
মানবিক পেনশন প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া:-
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, বর্তমানে মানবিক পেনশন প্রকল্পকে জয় বাংলা পেনশন স্কিমের আওতায় রাখা হয়েছে। সুতরাং আপনিও যদি মানবিক পেনশন প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম অথবা নিজের পরিবারের যেকোনো সদস্যের নাম নথিভুক্ত করতে চান তবে রাজ্য সরকারের কার্যকরী অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে এই প্রকল্পের ফর্মটি ডাউনলোড করে নিতে হবে। এরপর ফর্মের একেবারে প্রথম দিকে উল্লিখিত প্রকল্পের নামগুলির মধ্যে থেকে আপনাকে মানবিক প্রকল্পের নামটি সঠিকভাবে নির্বাচন করে নিতে হবে। প্রকল্পের নাম নির্বাচনের পর আপনাকে আবেদনকারীর নাম সঠিকভাবে লিখতে হবে।
এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি যে, ফর্মটি ইংরেজিতে পূরণ করতে হবে এবং সমস্ত ক্ষেত্রে বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হবে। আবেদনকারী ব্যক্তির নাম সঠিকভাবে লেখার পর আপনাকে আবেদনকারী ব্যক্তির জন্ম তারিখ এবং ফর্মে নির্ধারিত তারিখের ভিত্তিতে আবেদনকারীর বয়স সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। আবেদনকারীর তথ্যগুলি সঠিকভাবে উল্লেখ করার পর আবেদনকারীর পিতার নাম এবং মাতার নাম সঠিকভাবে লিখতে হবে। এরপর আবেদনকারী ব্যক্তির কাস্ট উল্লেখ করতে হবে। উপরোক্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করার পর আবেদনকারীর বৈবাহিক স্থিতি অর্থাৎ Marital status পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যক্তি বিবাহিত হলে Married অপশনটি নির্বাচন করবেন, আবেদনকারী ব্যক্তি অবিবাহিত হলে Unmarried অপশনটি বেছে নেবে। আবেদনকারী ব্যক্তি বিধবা হলে Widow অথবা Widower অপশনটি বেছে নিতে হবে এবং আবেদনকারী ব্যক্তির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকলে Separated অপশনটি বেছে নিতে হবে। সবশেষে আবেদনকারীর বৈবাহিক স্থিতি অনুসারে স্বামী অথবা স্ত্রীর নাম সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
পরবর্তীতে আবেদনকারী ব্যক্তির পরিবারের বাৎসরিক ইনকাম, ডিজিটাল রেশন কার্ড নম্বর, AHL TIN, আধার কার্ড নম্বর, ভোটার কার্ড নম্বর, প্যান কার্ড নম্বর, BPL Seq. নম্বর, BPL Id. নম্বর, BPL Total Score সঠিকভাবে ফর্মে উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, * চিহ্ন দেওয়া তথ্যগুলি বাধ্যতামূলকভাবে পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে * ছাড়া ফর্মে উল্লিখিত অন্যান্য তথ্য উল্লেখ না করলেও কোন সমস্যা হবে না। উপরোক্ত তথ্যগুলো পূরণ করার পর আবেদনকারীর রাজ্যের নাম, জেলার নাম, থানা, ব্লক/মিউনিসিপ্যালিটি, গ্রাম পঞ্চায়েত/ ওয়ার্ড নম্বর, গ্রাম/ শহর, বাড়ির নম্বর পোস্ট অফিস পিন কোড, বিধানসভা কেন্দ্র, ফোন নম্বর ইমেইল আইডি এবং কতদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন তা সঠিকভাবে লিখতে হবে।
এরপর আবেদনকারীর ব্যাংকের নাম ব্যাংকের ব্রাঞ্চের নাম একাউন্ট নম্বর এবং IFSC Code সঠিকভাবে লিখতে হবে। সবশেষে আবেদনকারী ব্যক্তি কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার, আবেদনকারী ব্যক্তি কত শতাংশ প্রতিবন্ধী এবং Certifying Authority এর নাম সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এরপর ফর্মটির সঙ্গে যুক্ত সেলফ ডিক্লারেশন ফর্মে আবেদনকারী ব্যক্তির নমিনির নাম এবং নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখ করতে হবে। এর পরবর্তীতে আপনি রাজ্য সরকার অথবা কেন্দ্র সরকারের তরফে কার্যকরী কোন স্কিমের আওতায় অনুদান পেয়ে থাকলে তাও উল্লেখ করতে হবে। তারপর সেলফ ডিক্লারেশন ফর্মের শেষে আবেদনকারীকে স্বাক্ষর করতে হবে এবং ফর্ম জমা দেওয়ার তারিখটি সঠিকভাবে লিখতে হবে তাহলেই ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র:-
১. পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ
২. জাতিগত শংসাপত্র বা কাস্ট সার্টিফিকেট
৩. Digital Certificate from Appropriate Authority
৪. ডিজিটাল রেশন কার্ড
৫. আধার কার্ড
৬. ভোটার কার্ড
৭. স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণপত্র বা রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট
৮. আবেদনকারীর পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
৯. ব্যাংকের পাস বইয়ের জেরক্স কপি
১০. বয়সের প্রমাণপত্র
ফর্মটি কোথায় জমা করতে হবে?
মানবিক প্রকল্পের ফর্মটি ডাউনলোড করে নিয়ে তা সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস অথবা বিডিও অফিসে জমা দিতে হবে। এছাড়াও আপনারা আপনাদের নিকটবর্তী দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পেও ফর্মটি জমা দিতে পারবেন। তবে যে সমস্ত ব্যক্তিরা অনলাইনের মাধ্যমে ফর্ম ডাউনলোড করতে ততটাও দক্ষ নন তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, আপনারা আপনাদের নিকটবর্তী দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকে মানবিক প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্তকরণের ফর্মটি পেয়ে যাবেন। ফর্মটি সংগ্রহ করার পর উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় পূরণ করে সংশ্লিষ্ট নথি সহকারে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে জমা দেওয়ার মাধ্যমেও আপনি মানবিক প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন।