প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপে আবেদন করলেই পাওয়া যাবে বছরে ৯৬ হাজার টাকা। বিস্তারিত জেনে নিন।

উচ্চ মাধ্যমিকের পর যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আগ্রহী হলেও নিজেদের অর্থনৈতিক অসচ্ছ্বলতার কারণে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারেন না সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে মাধব প্রসাদ প্রিয়ংবদা বিড়লা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট -এর তরফে প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্নাতক স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই স্কলারশিপটি বিশেষভাবে লঞ্চ করা হয়েছে। আর এই স্কলারশিপটির সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা যত শতাংশই নম্বর পেয়ে থাকুক না কেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন অর্থাৎ এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের নম্বর বিচার করা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় নথি এবং কিভাবে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন করা সম্ভব তা জানতেই উৎসুক হয়ে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী সহ অভিভাবকেরা।

প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা কি কি:-

১. প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের অধীনে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২. উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেই রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে কোন বিশেষ নম্বরের প্রয়োজন হয় না।
৩. উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে স্বীকৃত যেকোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে B.A., B.Com, B. Sc, BBA, BCA, LLB, B.E. / B. Tech., MBBS / BDS এর মত কোর্সগুলির অধীনে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন সেই সকল শিক্ষার্থীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৪. জেনারেল ক্যাটাগরিভুক্ত ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, ওবিসি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
৫. প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ৭৫ হাজার টাকা বা তার তুলনায় কম হতে হবে।
৬. স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ সহ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কার্যকরী অন্য যেকোনো স্কলারশিপের পাশাপাশি এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদানের জন্য আবেদন জানানো সম্ভব।

প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের আওতায় কত টাকার অনুদান পাওয়া যায়?

প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে এই স্কলারশিপের আওতায় থাকা প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে প্রত্যেক বছর ২৪ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ ৪ বছর পর্যন্ত এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পাওয়া সম্ভব, এমনটাই জানানো হয়েছে এই স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের তরফে। অর্থাৎ ৪ বছরে একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী মোট ৯৬,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে যাবেন।

প্রিয়ংবদা বিড়লা কলারশিপের আবেদনের প্রক্রিয়া:-

প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীকে সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। এই স্কলারশিপটি যেহেতু কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে প্রদান করা হয়ে থাকে, তাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট -এ পৌঁছে যেতে হবে। এরপর আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে আপনাকে আপনার ইমেইল এড্রেসটি সঠিকভাবে লিখে Submit অপশনে ক্লিক করতে হবে। উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার ইমেইল এড্রেসে একটি ভেরিফিকেশন ইমেইল পাঠানো হবে। এই ভেরিফিকেশন ইমেইলে একটি লিংক থাকবে, ওই লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনি প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি পূরণ করতে পারবেন।

ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার নাম, পিতার নাম, বয়স, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত তথ্য, পরিবারের বাৎসরিক আয় সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য, ব্যাংক একাউন্টের ডিটেইলস সহ ফর্মে উল্লিখিত অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর ফর্মে উল্লিখিত সমস্ত ডকুমেন্টগুলিকে সেলফ অ্যাটেস্টেড করে আপলোড করতে হবে। এরপর Submit অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে ফর্মটি সাবমিট করতে হবে। আপনি চাইলে ফর্মটি pdf আকারে save করে প্রিন্ট করে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন:- কর্ম সাথী প্রকল্পে আবেদন করলে পাওয়া যাবে ২ লক্ষ টাকা। আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন

আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক ডকুমেন্ট:-

মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের এডমিট
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশীট
যারা NEET অথবা JOINT পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে র‍্যাঙ্ক কার্ড
আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীর আইডি প্রুফ
পরিবারের বাৎসরিক আয়ের প্রমাণপত্র
আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি

নির্বাচনের প্রক্রিয়া:-

প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, প্রত্যেক বছর বিভিন্ন ক্যাটেগরির আওতাভুক্ত ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। আবেদনকারী শিক্ষার্থীর বিগত পরীক্ষার নম্বর, পরিবারের বাৎসরিক আয় এবং পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে এই স্কলারশিপের আওতায় কারা অনুদান পাবেন তা নির্বাচন করা হয়ে থাকে। প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের তরফে উপরোক্ত বিষয়গুলির ভিত্তিতে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় অনুদানের টাকা পেয়ে থাকেন, এমনটাই জানানো হয়েছে উক্ত স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের তরফে।

আবেদনের সময়সীমা:-

চলতি বছরে যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের জন্য প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়া এখনও পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি। অর্থাৎ যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হতে চলেছেন তারা এখনই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন না। খুব শীঘ্রই এই স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে বলেই দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সূত্রের তরফে। যদিও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা কবে থেকে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন তা সংক্রান্ত কোনো তথ্য অফিসিয়লি এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা হয়নি।

Leave a Comment