সমগ্র ভারতে বসবাসকারী তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত সংখ্যালঘু জনগণকে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জাতিগত শংসাপত্র বা কাস্ট সার্টিফিকেট কার্যকর করা হয়েছিল। মূলত সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জনগণকে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্যই এই কাস্ট সার্টিফিকেট কার্যকর করা হয়েছিল। আর বর্তমানে সারা ভারতের তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত সাধারণ জনগণের জন্য কার্যকরী নানা ধরনের প্রকল্প, স্কিম, স্কলারশিপ থেকে শুরু করে নানাবিধ সুবিধা পাওয়ার মূল মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই জাতিগত শংসাপত্র বা কাস্ট সার্টিফিকেট। কাস্ট সার্টিফিকেটের মাধ্যমে ভারতে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোর্স ফি থেকে থেকে শুরু করে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফি, এমনকি চাকরিক্ষেত্রে কিংবা কোনো কোর্সে নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নম্বর শতাংশেও ছাড় পেয়ে থাকেন।
সমগ্র ভারতের সাধারণ জনগণের মতোই পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত সংখ্যালঘু জনগণও কাস্ট সার্টিফিকেটের মাধ্যমে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকরী নানা পৃথক প্রকল্প স্কিম স্কলারশিপের সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে রাজ্যের সাধারণ জনগণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকারের তরফে এক বিশেষ পোর্টাল কার্যকর করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত সধারণ জনগণ বাড়িতে বসেই নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কাস্ট সার্টিফিকেট বা জাতিগত শংসাপত্রের জন্য আবেদন জানানো থেকে শুরু করে জাতিগত শংসাপত্রের স্ট্যাটাস চেক এবং বাড়িতে বসে জাতিগত শংসাপত্র বা কাস্ট সার্টিফিকেট ডাউনলোড পর্যন্ত করে নিতে পারেন।
তবে বাড়িতে বসেই কাস্ট সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কাজগুলি করার ক্ষেত্রে আপনাকে কতগুলি বিশেষ ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
১. অনলাইনের মাধ্যমে SC, ST কিংবা OBC সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার জন্য আপনাকে প্রথমেই পৌঁছে যেতে হবে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী Backward Classes Welfare Department -এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://castcertificatewb.gov.in/ -এ।
২. পরবর্তীতে আপনার সামনে এই ওয়েবসাইটের হোম পেজটি চলে আসবে। হোম পেজের একেবারে ডানদিকে থাকা APPLICANT অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে যে নতুন অপশনগুলি চলে আসবে তার মধ্যে থেকে Application Check অপশনটি নির্বাচন করে নিন।
৩. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে যে নতুন পেজছি আসবে তাতে আপনাকে আপনার Application No সঠিকভাবে লিখে Search অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৪. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনার কাস্ট সার্টিফিকেটটি রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের দ্বারা অ্যাপ্রুভ করা হয়েছে কিনা। কাস্ট সার্টিফিকেট অ্যাপ্রুভ করা না হলে আপনি কোনভাবেই এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের কাস্ট সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন না।
৫. যদি আপনার কাস্ট সার্টিফিকেট approve করা হয়ে থাকে তবে আপনাকে পুনরায় এই ওয়েবসাইটের হোম পেইজে যেতে হবে এবং হোম পেজের ডান দিকে থাকা APPLICANT অপশনের অধীনস্থ অপশনগুলির মধ্যে থেকে আপনাকে Download Certificate অপশনটি নির্বাচন করে নিতে হবে।
৬. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে আপনাকে আপনার অ্যাপ্লিকেশন নম্বর অথবা সার্টিফিকেট নম্বর, আপনার নাম সঠিকভাবে লিখে Download Certificate অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৭. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলেই আপনার কাস্ট সার্টিফিকেটটি আপনার ফোনে পিডিএফ রূপে ডাউনলোড হয়ে যাবে। আপনি এটিকে সফট কপি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, এছাড়া প্রয়োজনের খাতিরে এই সার্টিফিকেটটিকে প্রিন্ট করে নিয়ে হার্ড কপি রূপে ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন:- শুরু করুন মুরগির ফার্মের ব্যবসা এবং মাস গেলে উপার্জন করুন ভাল পরিমাণ টাকা
কারা এই পদ্ধতির সুবিধা নিতে পারবেন?
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাস কিংবা তার পরবর্তীতে যে সমস্ত ব্যক্তিরা কাস্ট সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তারাই কেবলমাত্র Backward Classes Welfare Department -এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের কাস্ট সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে যে, সরকারি অফিস থেকে কাস্ট সার্টিফিকেটের আবেদনপত্র গ্রহণ এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাস্ট সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের অধীনে কর্মরত কর্মীদের যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই কাস্ট সার্টিফিকেটের অ্যাপ্রুভাল না পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের বারংবার খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। আর এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করার জন্যই রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যের সংখ্যালঘু জনসাধারণের সুবিধার খাতিরে এই বিশেষ অনলাইন পোর্টাল কার্যকর করা হয়েছে। এই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাস্ট সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের সাধারণ জনগণকে যেমনভাবে কোনরূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না, ঠিক তেমনভাবেই কাস্ট সার্টিফিকেটের আবেদনের স্ট্যাটাসে কিংবা নিজের মোবাইলের মাধ্যমে কাস্ট সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গবাসী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত জনগণকে কোনোরূপ সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় না।
এমনকি রাজ্য সরকারের তরফে এই নতুন ওয়েবসাইট লঞ্চ করার ফলে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের কাজের ঝক্কিও খানিকটা কমেছে বলেই দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে। আর তাতেই রাজ্য সরকারের তরফে গৃহীত এই নয়া উদ্যোগ সমগ্র রাজ্যের সাধারণ জনগণের কাছে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে।