কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকারের তরফে বেকার, কর্মহীন যুবক-যুবতীদের কর্মমুখী করে তোলার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প, যোজনা কার্যকর করা হয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে সমগ্র রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মদ্যোগী করে তোলার জন্য কার্যকরী এমনই এক বিশেষ প্রকল্প হলো গতিধারা প্রকল্প, যার আওতায় রাজ্যের যুবক-যুবতীরা গাড়ি কেনার জন্য অনুদান পেয়ে থাকেন।
গতিধারা প্রকল্প কি?
রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তর এবং পরিবহণ দপ্তরের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী কর্মহীন যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের তরফে গতিধারা প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই গতিধারা প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের বেকার, কর্মহীন যুবক-যুবতীরা বাণিজ্যিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আংশিক অনুদান পেয়ে থাকেন। মূলত রাজ্যের বেকার যুবক, যুবতীরা যাতে নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যান্য যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই গতিধারা প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে।
গতিধারা প্রকল্পের আওতাধীন যুবক-যুবতীরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন?
১. রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, গতিধারা প্রকল্পের আওতাধীন যুবক যুবতীরা বাণিজ্যিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ % ভর্তুকি পেয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে একজন আবেদনকারীকে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকার ভর্তুকি প্রদান করা হয়ে থাকে। যদিও মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকার ভর্তুকি প্রদান করা হয়ে থাকে।
২. গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে এই প্রকল্পের আওতাধীন ব্যক্তিরা বাকি ৭০ শতাংশ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে সংগ্রহ করতে পারবেন। যদিও ঋণ পরিশোধ করার সময়সীমা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের তরফে কোনরূপ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি, এক্ষেত্রে ব্যাংকের তরফেই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
৩. গতিধারা প্রকল্পের আওতাধীন ব্যক্তিরা গাড়ির পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। যদিও এক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
৪. বিশেষভাবে সক্ষম যুবক-যুবতীরাও এই প্রকল্পের আওতায় সমস্ত রকম সুবিধা পেয়ে থাকেন।
গতিধারা প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা কি কি?
রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তর এবং পরিবহণ দপ্তরের তরফে কার্যকরী তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা কেবলমাত্র গতিধারা প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী নিয়ম অনুসারে তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতিভুক্ত ব্যক্তিরা বয়সের ক্ষেত্রে ৫ বছরের ছাড় পাবেন এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিরা বয়সের ক্ষেত্রে ৩ বছরের ছাড় পাবেন। এক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যক্তিদের বয়স উক্ত ব্যক্তি যে বছরে আবেদন করছেন সেই বছরের ১ লা এপ্রিল তারিখ অনুসারে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:- দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমে কোন কোন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানো সম্ভব, জেনে নিন।
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্যে আরও জানানো হয়েছে যে, গতিধারা প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যক্তির পরিবারের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকার চেয়ে কম হতে হবে। এক্ষেত্রে একটি পরিবারের একজন সদস্যই এই প্রকল্পের সুবিধা লাভ করতে পারবেন। তবে সরকারি অথবা বেসরকারি যেকোনো প্রকার কাজের সঙ্গে যুক্ত যুবক-যুবতীরা কোনভাবেই গতিধারা প্রকল্পের আওতায় কোনভাবেই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবে না। রাজ্যের যুবক-যুবতীদের উদ্দেশ্যে আরো জানিয়ে রাখি যে, গতিধারা প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংকের অধীনে নাম নথিভুক্ত না থাকলে কোনোভাবেই গতিধারা প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব।
আবেদনের প্রক্রিয়া:-
শ্রম দপ্তর এবং পরিবহণ দপ্তরের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, গতিধারা স্কিমের ক্ষেত্রে যানবাহন বিক্রেতারা হল অনুমোদিত ফ্যাসিলিটেটর। এক্ষেত্রে যে সমস্ত ব্যক্তিরা গতিধারা প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে চান তাদের গতিধারা প্রকল্পের অধীনস্থ যেকোনো ডিলারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সহকারে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। আবেদনপত্র জমা করার পর উক্ত আবেদনপত্রটি পরিবহণ দপ্তরের কাছে পাঠানো হবে। পরিবহণ দপ্তরের তরফে অনুমোদন পাওয়া গেলে আবেদনকারী ব্যক্তিকে আঞ্চলিক স্তরের পারমিটের জন্য আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের অফিসে অর্থাৎ RTO অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে আরও জানা গিয়েছে যে, রাজ্যস্তরে পারমিট পাওয়ার জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিকে স্টেট ট্রান্সপোর্ট অথরিটির অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে আরো জানা গিয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে আয়োজিত গতিধারা মেলার মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতাধীন ব্যক্তিদের ভর্তুকির চেক বিতরণ করা হয়ে থাকে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. আবেদনকারী যুবক অথবা যুবতীর পরিবারের বাৎসরিক আয়ের শংসাপত্র।
২. আবেদনকারী ব্যক্তি যে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংকের আওতাধীন তার প্রমাণপত্র।
৩. আবেদনকারীর বয়সের প্রমাণপত্র।
৪. আবেদনকারী ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র।
৫. আবেদনকারীর ফটো আইডেন্টিটি প্রুফ।
৬. ব্যাংক একাউন্টের পাশ বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার জেরক্স কপি।
৭. গতিধারা ফ্যাসিলিটেটর দ্বারা জারি করা বাণিজ্যিক গাড়ির জন্য কোটেশন।
৮. স্ব-ঘোষণাপত্র।
৯. আবেদনকারীর সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।