বিশ্ব ব্যাপী ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব এসে পড়েছে সমগ্র ভারতে, আর তা থেকে কোনভাবেই বাদ পড়েনি পশ্চিমবঙ্গের নাম। আর তাতেই রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকর বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প, স্কিম এবং স্কলারশিপের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে রাজ্যের সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট, অ্যাপ কার্যকর করা হয়েছে। তবে সমস্যা অন্য ক্ষেত্রে। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জায়গায় এখনো পর্যন্ত উন্নত মানের ইন্টারনেট কানেকশন এসে পৌঁছায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই উন্নত মানের ইন্টারনেট কানেকশন এসে পৌঁছালেও বহু মানুষই এখনো পর্যন্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার জানেন না। অধিকাংশ বয়সপ্রাপ্ত মানুষই সঠিকভাবে স্মার্টফোনের ব্যবহার করতে জানেন না। যার কারণে রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী কোনরূপ প্রকল্প, স্কিম অথবা স্কলারশিপ -এর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সরকারি অফিসের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়, নতুবা সাইবার ক্যাফের শরণাপন্ন হতে হয়।
আর তাতেই প্রতিনিয়ত সাইবার ক্যাফে বা ইন্টারনেট ক্যাফের চাহিদা ক্রমাগত হারে বাড়ছে। সাইবার ক্যাফের এই বাড়তে থাকা চাহিদাকে কাজে লাগিয়েই আপনি এখন নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ডিজিটালাইজেশনের কারণে অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে সাইবার ক্যাফের সাথে যথেষ্টভাবে পরিচিত। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা সাইবার ক্যাফের ব্যবসার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
সাইবার ক্যাফে কি?
সাইবার ক্যাফে বলতে এমন একটি জায়গাকে বোঝানো হয়ে থাকে যেখানে অর্থের বিনিময়ে সাধারণ মানুষকে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে নানা ধরনের কাজ করার সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই সাইবার ক্যাফের মালিকও একটি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময় সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় এই সমস্ত কাজ করে দিয়ে থাকেন। এছাড়াও সাইবার ক্যাফেতে আপনি ফটোকপি, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট কিংবা কালার প্রিন্টিং -এর সুবিধা পেয়ে যাবেন।
সাইবার ক্যাফের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কি কি প্রয়োজন:-
সাইবার কাফের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ঘর প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার বাড়িতেই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন, তবে আপনার বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়েও সাইবার ক্যাফের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এর পাশাপাশি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনি আপনার বিনিয়োগ অনুসারে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার কিনে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এছাড়াও ভালো ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য WIFI কেনা আবশ্যক। তবে এই সমস্ত জিনিসের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু জিনিস প্রয়োজন হয়ে থাকে। এগুলি হল: কম্পিউটার টেবিল ও চেয়ার, ওয়েব ক্যামেরা, হেডফোন, প্রিন্টার এবং জেরক্স মেশিন। অন্যদিকে, দোকানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরাও প্রয়োজন হয়ে থাকে। প্রথমেই এত জিনিস কিনতে না পারলে আপনি আপনার সামর্থ্য অনুসারে কম্পিউটার সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, পরবর্তীতে ব্যবসায় লাভ হতে শুরু করলে আপনি গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুসারে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
আরও পড়ুন:- টাটা স্কলারশিপে আবেদন করুন এবং পেয়ে যান সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা
জায়গা নির্বাচন:-
সাইবার কাফের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হল, আপনার দোকানটি এমন জায়গায় শুরু করতে হবে যা সহজেই জনসাধারণের নজরে পড়ে। প্রচুর লোক সমাগম হয়ে থাকে এইরূপ জায়গাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি প্রচুর লোকের ভিড় হয়ে থাকে তাহলে দোকানটি আপনি আপনার বাড়িতেই শুরু করতে পারেন, কিন্তু যদি তা না হয় তাহলে আপনার নিকটবর্তী এলাকায় যেখানে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ কাজের প্রয়োজনে এসে থাকেন সেই স্থানে আপনি আপনার দোকানটি শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার এলাকার যেকোনো স্কুলের পাশেে, বিডিও অফিসের নিকটে, পঞ্চায়েত অফিসের নিকটে নিজের দোকানটি শুরু করতে পারেন। যেহেতু এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রত্যেকদিন বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প স্কলারশিপ স্কিম থেকে শুরু করে নানাবিধ ক্ষেত্রের আবেদন প্রক্রিয়া চলে, ফলত এই সমস্ত জায়গায় দোকান খুললে আপনার লাভের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
কিভাবে ব্যবসা শুরু করবেন:-
ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে আপনার দোকানের সাথে মানানসই একটি নাম নির্বাচন করতে হবে। এরপর আপনাকে আপনার দোকানের সামনে একটি ব্যানার টাঙাতে হবে যা লোককে আকর্ষণ করবে। এই ব্যানারে আপনার দোকানে কি কি সুবিধা পাওয়া যায় তা সম্পর্কে সঠিকভাবে উল্লেখ করবেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে লোকাল মার্কেটের বিভিন্ন জায়গায় আপনি আপনার দোকানের প্রচারের জন্য পোস্টার টাঙাতে পারেন, এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আপনার দোকানের প্রচার বাড়বে এবং আপনার দোকানেও ভিড় বাড়বে। আপনি যদি নিজে কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে সাইবার ক্যাফের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা মিলে। তবে আপনি যদি কম্পিউটার সংক্রান্ত বিষয়গুলি সেভাবে না জেনে থাকেন তবে কম্পিউটার সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষ এমন একজন ব্যক্তিকে নিজের দোকানে কর্মচারী হিসেবে রাখতে পারেন। গ্রাহক যাতে কোনভাবেই ফিরে না যায় সেদিকেও বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। এর পাশাপাশি আরো জানিয়ে রাখি যে, আপনার দোকানে আসা গ্রাহকদের যেকোনো ক্ষেত্রের কাজ করার জন্য অবশ্যই সাহায্য করবেন। যে সকল গ্রাহকরা নিজে ফর্ম পূরণ থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজগুলি করতে পারবেন না অর্থের বিনিময়ে তাদের ফর্ম পূরণ সহ অন্যান্য কাজগুলি করে দেবেন। তবেই তারা অন্য যেকোনো দোকানের বদলে আপনার দোকানটিকে নির্বাচন করবেন।
বিনিয়োগ:- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার সহ অন্যান্য জিনিসপত্র সহকারে পুরোদমে সাইবার ক্যাফের ব্যবসা শুরু করতে গেলে আপনাকে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হবে।
লাভের পরিমাণ:- সাইবার ক্যাফের ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে আপনি প্রত্যেক মাসে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রথম দিকে লাভ কম হলেও আপনার ব্যবসা যত প্রচার পাবে, তত বেশি করে লাভের টাকা উঠে আসবে।