কথাতেই রয়েছে মাছে ভাতে বাঙালি। তবে শুধু বাঙালি নয় সমগ্র ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে মাছ বরাবরই সমাদৃত হয়েছে। আর সমগ্র বিশ্বব্যাপী মাছের এই ব্যাপক চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এখন আপনি আপনার নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তবে মাছের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে তা হল:
মাছের চাষের ব্যবসা কি?
মাছ চাষের ব্যবসা বলতে পুকুর, ফিশারি, খাল এই সমস্ত জায়গাতে ছোট মাছ কিংবা মাছের চারা ছেড়ে সেগুলিকে যথাযথভাবে পরিচর্যা করে বড় করে তোলার পর মাছ বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনকে বোঝানো হয়ে থাকে।
বিশ্বজুড়ে মাছের চাহিদার কারণ:-
বিজ্ঞানীদের নানান পৃথক পৃথক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে, মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন থাকে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও নানাবিধ সামুদ্রিক মাছ থেকে বিভিন্ন প্রকার জীবনদায়ী ওষুধ তৈরি হয়, যার ফলে বর্তমানে সমগ্র বিশ্বজুড়ে মাছের চাহিদা রীতিমতো তুঙ্গে। আর এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে আপনি নিজস্ব মাছের ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে প্রতিমাসে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন।
কিভাবে মাছ চাষ করতে হবে?
মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে পুকুর, খাল, অথবা যেকোনো জলাশয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে আপনার বাড়িতে যদি নিজস্ব জলাশয় থাকে তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই, তবে যদি তা না থাকে তাহলে আপনি নিজের পছন্দমাফিক জায়গা কিনে পুকুর খনন করে নিতে পারেন। এছাড়াও অন্য ব্যক্তির পুকুর লিজ নেওয়ার মাধ্যমেও আপনি মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনি যে পুকুরটি নির্বাচন করুন না কেন সেই পুকুরটিকে মাছ চাষের উপযুক্ত করে নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে আরও জানিয়ে রাখি যে, বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ট্যাংকের মাধ্যমেও মাছ চাষ করা সম্ভব। ট্যাংকের মাধ্যমে মাছ চাষের জন্য বিভিন্ন আকারের ট্যাংক কিনতে পাওয়া যায়, পুকুরের পরিবর্তে এই সমস্ত ট্যাংকগুলিতেও আপনি নিজের সুবিধা অনুসারে মাছ চাষ করতে পারবেন। এই সমস্ত ট্যাংকগুলি আপনি আপনার বাড়ির নিকটবর্তী লোকাল মার্কেটে পেয়ে যাবেন অথবা নানাবিধ অনলাইন শপিং অ্যাপের মাধ্যমেও এই সকল ট্যাংক কিনে নিতে পারবেন।
তবে আপনি যদি পুকুর কিংবা খাল অথবা অন্য কোনো জলাশয়ে মাছ চাষের পরিকল্পনা করে থাকেন তবে আপনাকে প্রথমেই ওই জলাশয়টিকে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। আপনি উক্ত জলাশয়ে চুন কিংবা ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর মাধ্যমে জল জীবাণুমুক্ত করে নিতে পারবেন। জলে থাকা বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া চারা মাছের ক্ষতি করে যার ফলে মাছ মারা যায়। আর ব্যবসার শুরুতেই মাছ মারা যেতে থাকলে ব্যবসায় সমূহ লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এই সমস্যা দূর করার জন্য মাছ চাষের পূর্বে জলাশয় টিকে জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জল জীবাণুমুক্ত করার পর আপনি যে ধরনের মাছ চাষ করতে চাইছেন তার জন্য ওই জলাশয়ের জল উপযুক্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিন। এরপর আপনার পছন্দসই মাছের চারা অথবা ছোট মাছ কিনে এনে উক্ত জলাশয় ছাড়তে হবে এবং এই সমস্ত মাছগুলির যথেষ্ট রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করতে হবে। মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো, মাছের খাবার। মাছের প্রজাতি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন খাবার প্রয়োজন হয়ে থাকে। সুতরাং আপনি যে ধরনের মাছ চাষ করছেন তার জন্য উপযুক্ত খাবার কোনগুলি তা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবেন। মনে রাখবেন আপনাকে প্রতিনিয়ত একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাছের চারাগুলিকে খাবার দিতে হবে।
এছাড়াও মাছের কোনো অসুখ হচ্ছে কিনা সেই বিষয়েও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। কারণ একটি মাছের অসুখ হলে খুব সহজেই তা পুকুরের অন্যান্য মাছের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে মাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ব্যবসায়ীর লোকসানের সম্ভাবনাও থেকে যায়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, মাছের কোনো অসুখ হলে আপনি পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এবং সোডিয়াম ব্যবহার করতে পারেন, যা মাছের অসুখ নিরাময়ের সহায়তা করবে। এছাড়াও আপনি যে জলাশয়ে মাছ চাষ করছেন তার জলের গুণমান বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পারলে প্রত্যেক সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার করে জল পরিস্কার করুন, যদি তা না হয় তাহলে প্রত্যেক মাসে অন্ততপক্ষে একবার জল পরিস্কার করুন এবং জলের গুণগতমান ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। এইভাবে মাছগুলি বড় হয়ে উঠলে সেগুলিকে বাজারজাত করার ব্যবস্থা করুন।
আরও পড়ুন:- ছাত্র ছাত্রীদের জন্য চালু হতে চলেছে নতুন বৃত্তি। লেটার বক্স স্কলারশিপ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানুন।
মাছ বিক্রি করবেন কিভাবে?
ভারতে যেহেতু মাছের চাহিদা যথেষ্ট বেশি তাই আপনি পাইকারি এবং খুচরা উভয় পদ্ধতিতেই মাছ বাজারজাত করতে পারবেন। পাইকারি হিসেবে মাছ বিক্রি করার ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটবর্তী মাছের আড়ত, হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং যে সমস্ত ব্যক্তিদের মাছের দোকান রয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অন্যদিকে খুচরা হিসেবে মাছ বিক্রি করার ক্ষেত্রে আপনাকে নিজস্ব দোকান তৈরি করতে হবে, এই দোকানের মাধ্যমেই আপনি সরাসরি গ্রাহকদের কাছে মাছ বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার এলাকায় যে হাট রয়েছে তাতেও আপনি মাছের পসরা নিয়ে বসতে পারেন, তাতে লাভ বাড়বে বই কমবে না। এছাড়াও মাছের চারা কিংবা ছোট মাছ বিক্রি করার মাধ্যমেও আপনি অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
মাছের ব্যবসায়ে বিনিয়োগের পরিমাণ:-
বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমীক্ষা অনুসারে জানা গিয়েছে যে, মাছ চাষের জন্য ৫০,০০০ টাকা থেকে ১,০০,০০০ টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে বিনিয়োগ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে মাছ চাষীদের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। এই সমস্ত প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ছোট মাছ বা চারা প্রদান থেকে শুরু করে লোন পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে। সুতরাং আপনি যদি মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে থাকেন কিন্তু আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকে তবে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, রাজ্য সরকারের এই সমস্ত প্রকল্পের মাধ্যমেই আপনি মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
মাছ চাষের ব্যবসা থেকে লাভের পরিমাণ:-
সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত জুড়ে ক্রমাগত হারে মাছের চাহিদা বাড়ছে, সুতরাং মাছ চাষের ব্যবসায় লোকসানের কোন চিন্তা নেই। এক্ষেত্রে আপনি একবার পুকুর কিংবা খাল অথবা ফিশারিতে মাছের চারা ছাড়লে সেই মাছগুলি বড় হওয়ার পর পুনরায় তা থেকে ছোট মাছের জন্ম হবে। এরপর আপনি বড় মাছগুলিকে বিক্রি করলেও আপনাকে আর আলাদা করে ছোট মাছের চারা কিনতে হবে না। পুকুরে স্বাভাবিক নিয়মে যে ছোট মাছের জন্ম হবে সেগুলিকে বড় করার মাধ্যমেই আপনি পুনরায় মাছ চাষ করতে পারবেন। আর এভাবেই মাছ চাষের ব্যবসার মধ্যে দিয়ে আপনি আপনার বিনিয়োগের পাঁচ গুণ থেকে দশ গুণ অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, মাছ চাষের ব্যবসার মাধ্যমে আপনি প্রত্যেক মাসে অন্ততপক্ষে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন। তবে মাছ চাষ করে আপনি কত টাকা লাভ করছেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনি কি জাতের মাছ চাষ করছেন এবং মাছের ফলনের পরিমাণের উপর।