শিশু হোক বা কিশোর-কিশোরী কিংবা মধ্যবয়সী ব্যক্তি প্রত্যেকেরই ওষুধের প্রয়োজন হয়েই থাকে। দরিদ্র হোক বা মধ্যবিত্ত কিংবা ধনী ব্যক্তি অসুস্থ হলে প্রত্যেকেরই ওষুধ প্রয়োজন। আর তাতেই সমগ্র ভারত জুড়ে ক্রমাগত হারে ওষুধের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে শুধুমাত্র ওষুধের চাহিদা বাড়ছে এমন বলাটা ভুল হবে। সমগ্র বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাবিধ রোগের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই সুস্থ হওয়ার চাহিদায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ওষুধের প্রয়োজনও বাড়ছে। আর এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়েই আপনি নিজের নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, ক্রমবর্ধমান ওষুধের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে আপনি নিজস্ব ওষুধের দোকান শুরু করার মাধ্যমে ওষুধের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নতুন ব্যবসা শুরু করবার পূর্বে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যবসাটিকে নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়ে যায়। আর সঠিক সময় এই সমস্ত প্রশ্নগুলির উত্তর না পেলে ব্যবসা থেকে লাভের বদলে লোকসানের সম্ভাবনাই বেড়ে যেতে থাকে। সমগ্র ভারতব্যাপী চলতে থাকা অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবং লোকসানের ভয়ে অধিকাংশ মানুষই নতুন ব্যবসায় এগোতে গিয়ে বারংবার পিছপা হন।
ওষুধের দোকান খোলার ক্ষেত্রে কেমন জায়গা প্রয়োজন?
ওষুধের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে প্রথমেই নির্বাচন করতে হবে আপনি ওষুধের দোকানটি কোথায় খুলতে চান। আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি যথেষ্ট লোকের আনাগোনা হয়ে থাকে তবে আপনি আপনার বাড়িতেই নিজস্ব ওষুধের দোকান খুলতে পারেন। আপনি যদি আপনার বাড়িতে দোকানটি খুলতে না চান তবে আপনার এলাকায় যেখানে সবথেকে বেশি লোকসমাগম হয়ে থাকে সেখানে আপনার ওষুধের দোকান খুলতে পারেন। এছাড়াও আপনার স্থানীয় হাসপাতালের আশেপাশেও ওষুধের দোকান খুলতে পারেন কিংবা আপনার এলাকায় যে সমস্ত নার্সিংহোমগুলি রয়েছে তার যেকোনো একটিকে নির্বাচন করে তার আশেপাশেও নিজের ওষুধের দোকান খুলতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে দোকান ভাড়া নিতে পারেন অথবা জায়গা কিনে নিজস্ব দোকান তৈরি করে নিতে পারেন। ওষুধের দোকান খোলার ক্ষেত্রে ১৬০ স্কোয়ার ফুট জায়গা প্রয়োজন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হল, আপনি যে ঘরটি ভাড়া নিচ্ছেন অথবা আপনার বাড়ির যে ঘরে ওষুধের ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন সেই ঘরে যেন কোন প্রকার জানালা না থাকে।
ওষুধের দোকান খোলার ক্ষেত্রে কি কি প্রয়োজন?
ওষুধের দোকান খোলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জায়গার পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স এবং ড্রাগ লাইসেন্স প্রয়োজন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি শিল্পসাথী ওয়েবসাইট এর মারফত অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে ড্রাগ লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন তা হল, যেসকল ব্যক্তিরা বি ফার্মা, ডি ফার্মা, এম ফার্মা, ফার্মা ডি -এর মত কোর্সগুলির অধীনে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন তারাই ওষুধের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তবে আপনি যদি উপরোক্ত কোর্সগুলির কোনোটিই সম্পন্ন না করে থাকেন তবে নিজস্ব ওষুধের দোকান শুরু করার জন্য আপনাকে একজন ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করতে হবে। এর পাশাপাশি ওষুধের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ফ্রিজ প্রয়োজন হবে। এর পাশাপাশি ওষুধগুলো সাজিয়ে রাখার জন্য স্লাইডিং কাচের শোকেস, ফার্মাসির রাক প্রয়োজন হবে। এর পাশাপাশি ড্রয়ার সহ কাউন্টার, কম্পিউটার কাউন্টার এবং মেডিকেল কাউন্টার, ডিসপ্লে র্যাক প্রয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়াও থার্মোমিটার, প্রেশার মাপার যন্ত্র, সুগার মাপার যন্ত্র, ওজন মাপার যন্ত্র প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:- রাজ্যের ঐক্যশ্রী স্কলারশিপে আবেদন করলেই পেয়ে যাবেন ৩৬ হাজার টাকা, বিস্তারিত জেনে নিন
ওষুধ কিনবেন কিভাবে?
ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই দেখে নিতে হবে আপনার নিকটবর্তী এলাকার যেসকল ডাক্তার রয়েছে অথবা আপনার দোকানের নিকটবর্তী যে সমস্ত ডাক্তার রয়েছে তারা কোন ধরনের ওষুধ বেশি পরিমাণে প্রেসক্রাইব করেন। আপনার দোকানের নিকটবর্তী ডাক্তাররা যে সমস্ত ওষুধগুলি বেশি পরিমাণে প্রেসক্রাইব করবেন আপনি সেই ওষুধগুলি বেশি পরিমাণে আপনার দোকানে স্টক করবেন। এর পাশাপাশি ঠান্ডার ওষুধ, জ্বরের ওষুধ, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধ, পেটের বিভিন্ন অসুখের ওষুধ, ORS, ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ, ন্যাপকিন, বেবি ফুড, বেবি অয়েল, বেবি পাউডারের মত জিনিসগুলি অবশ্যই দোকানে রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মূল প্রশ্নটি হল এই সমস্ত ওষুধ সহ অন্যান্য জিনিসগুলি কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে? আর এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় যে, আপনি আপনার নিকটবর্তী ওষুধের ডিলারের কাছ থেকে নিজে ড্রাগ লাইসেন্স এবং ট্রেড লাইসেন্স -এর মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় ওষুধগুলি কিনে নিতে পারবেন। এছাড়া বেবি ফুড, বেবি অয়েল সহ অন্যান্য সামগ্রীগুলি আপনি আপনার নিকটবর্তী যেকোনো লোকাল মার্কেট থেকে পাইকারি দরে কিনে নিতে পারবেন।
ব্যবসা শুরুর পদ্ধতি:-
আপনার ওষুধের দোকান সম্পর্কে প্রচারের জন্য প্রথমে আপনাকে মাইকিং এবং হোডিং -এর সহায়তা নিতে হবে। এছাড়াও আপনি গ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য ওষুধের উপরে বেশ কিছু নতুন অফার চালু করতে পারেন। এরপর ধীরে ধীরে আপনার ব্যবসা চলতে শুরু করলে আপনি এই ব্যবসা থেকে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
তবে ওষুধের ব্যবসার ক্ষেত্রে একেবারেই সমস্ত ওষুধ কিনে রাখা সম্ভব নয়। এর জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট খাতা রাখতে হবে। কোন ওষুধটি প্রয়োজন, কোন ওষুধের চাহিদা বেশি, কোন ওষুধ নতুন করে দোকানে রাখতে হবে, কোন ওষুধের চাহিদা কমছে এই সমস্ত সম্পর্কে ওই খাতায় হিসাব করে রাখবেন এবং তা অনুসারে পরবর্তীতে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করবেন, তাহলেই ওষুধ নির্বাচন এবং কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে কোন রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। এছাড়াও আপনি আপনার এলাকার যে সমস্ত ছোট ছোট ওষুধের দোকান রয়েছে সেই সমস্ত দোকানগুলিতে পাইকারি দরে ওষুধ বিক্রি করার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসাটিকে বাড়াতে পারেন।
তবে এখানেই শেষ নয়, আপনার ফার্মেসির আশেপাশে যদি বিশেষ কোনো নার্সিংহোম বা কোন ডাক্তারের চেম্বার না থাকে তবে আপনি আপনার ফার্মেসিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের নামকরা ডাক্তারদের বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। এর ফলে রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে আপনার দোকান থেকে ওষুধ কিনে নেবেন। যার ফলে আপনার ব্যবসাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও জানিয়ে রাখি যে, কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করা অবশ্য প্রয়োজনীয়। কোন ওষুধ কখন খেতে হবে, কতদিন খেতে হবে এই সমস্ত বিষয়গুলি কাস্টমারদের ভালোভাবে বুঝিয়ে বললে তারা অন্য দোকানের বদলে আপনার দোকানকেই বারংবার বেছে নেবেন।
কত টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে?
একটি ওষুধের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে দোকান ঘর, বিভিন্ন ধরনের আসবাব এবং ওষুধ কেনার খরচ সহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৪.৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে আপনি যদি ছোট করে ব্যবসাটি শুরু করতে চান তবে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
ব্যবসার ক্ষেত্রে লাভ:-
বিভিন্ন ক্ষেত্রের রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, একটি ওষুধের ব্যবসা ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ২০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। সুতরাং আপনি যদি ৩ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন তবে ওষুধের ব্যবসা থেকে আপনি প্রতি মাসে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন।