সমগ্র ভারত জুড়ে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য এবং নারী উন্নয়নের খাতিরে বিভিন্ন প্রকার প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী এই সমস্ত প্রকল্পগুলির মধ্যে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভারতের সাধারণ জনগণ যাতে কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই কন্যা সন্তানকে লালন পালন করতে পারে এবং নিজের কন্যা সন্তানের উচ্চ শিক্ষার সম্পন্ন করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা কার্যকর করা হয়েছে।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা:-
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা অথবা অভিভাবককে নিজের নিকটবর্তী পোস্ট অফিস কিংবা ব্যাংকে যেতে হবে এবং অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। মূলত কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার খাতিরে এই অ্যাকাউন্ট প্রত্যেক মাসে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হয় এবং কন্যা সন্তানের ২১ বছর বয়স হলেই এই যোজনায় বিনিয়োগকৃত টাকা সুদসহ ফেরত পাওয়া যায়। উক্ত কন্যাসন্তান এই টাকা দিয়ে নিজের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে অথবা নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারে কিংবা নিজের বিয়ের কাজে লাগাতে পারে। এছাড়াও কন্যা সন্তানের ১৮ বছর বয়স হলেই যদি তার বিয়ে স্থির করা হয় তবে ওই সময় সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় বিনিয়কৃত সমস্ত টাকা তুলে নেওয়া যাবে, অথবা ১৮ বছর বয়সেই যোজনার অধীনে বিনিয়োগকৃত টাকার অর্ধেক টাকা উত্তোলন করা যাবে। এছাড়াও এই যোজনার অধীনে ৮০ সি ধারায় করের ক্ষেত্রেও ছাড় পাওয়া যাবে।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় কারা নিজেদের কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন?
১. সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় ১০ বছরের কম বয়সী কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব। অর্থাৎ কন্যা সন্তান জন্মের পর থেকে তার ১০ বছর বয়স পর্যন্ত এই যোজনার আওতায় উক্ত কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করা যেতে পারে।
২. সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে যেকোনো ভারতীয় নাগরিক তার ২ টি কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। তবে কোনো ক্ষেত্রে যদি দ্বিতীয়বারে যমজ সন্তানের জন্ম হয় অথবা একই সাথে তিনটি যমজ সন্তানের জন্ম হয় তবে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা অধীনে ৩ টি কন্যা সন্তানের নামই নথিভুক্ত করা যাবে।
৩. দুটি কিংবা তিনটি কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক কন্যা সন্তানের নামে আলাদা আলাদা সিঙ্গেল একাউন্ট থাকা আবশ্যক। কোনোরকম জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অধীনে আবেদন জানানো সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:- ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিগ্রী ছাড়াই গুগলে বার্ষিক ৫০ লক্ষ টাকার চাকরি পেলেন হার্ষাল জুইকার।
আবেদনের প্রক্রিয়া:-
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় নিজের কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করণের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই নিজের বাড়ির নিকটবর্তী পোস্ট অফিস কিংবা যেকোনো ব্যাংকে যেতে হবে। এরপর সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করে সেটি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি অ্যাটাচ করে ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে জমা করতে হবে। সবশেষে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার মাধ্যমে এই যোজনার আওতাধীন অ্যাকাউন্টটি অ্যাক্টিভ করতে হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক নথি:-
১. কন্যা সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট।
২. পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবকের ফটো আইডেন্টিটি প্রুফ।
৩. পিতা-মাতা অথবা অভিভাবকের স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র।
৪. পিতা, মাতা কিংবা অভিভাবকের প্যান কার্ড ও ভোটার কার্ড।
৫. একইসাথে একাধিক সন্তানের জন্ম হলে তার প্রমাণস্বরূপ কন্যাসন্তান যে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছে সেই হাসপাতালের তরফে জারি করা মেডিকেল সার্টিফিকেট।
এছাড়াও ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের তরফে যদি কোন নথি চাওয়া হয় তবে নথিগুলির সাথে পোস্ট অফিস অথবা ব্যাংকের তরফে উল্লিখিত নথিও জমা করতে হবে।