পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী সহায় সম্বলহীন, দুঃস্থ, আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর সাধারণ জনগণের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে খাদ্য সাথী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে চাল, গম, আটা সহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য পেয়ে থাকেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বহু সংখ্যক মানুষ খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন বলেই জানা গিয়েছে, এমনকি আগামী দিনেও পশ্চিমবঙ্গের বহু সংখ্যক জনগণ এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করবেন বলেই মনে করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহলের কর্মকর্তাদের তরফ।
খাদ্য সাথী প্রকল্প কি?
মূলত পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর সাধারণ জনগণকে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে খাদ্যদ্রব্য প্রদানের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে এই বিশেষ প্রকল্পটি কার্যকর করা হয়েছে। খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতাধীন ব্যক্তিরা পুরনো রেশন কার্ডের পরিবর্তে ডিজিটাল খাদ্য সাথী কার্ড পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি কার্ডে একটি পৃথক নম্বর উল্লেখ করা থাকে, যা উক্ত ব্যক্তির খাদ্য সাথী নম্বর। বর্তমানে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গব্যাপী এই ডিজিটাল রেশন কার্ড যথেষ্ট জনপ্রিয়তা এবং গুরুত্ব লাভ করেছে।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতাধীন ব্যক্তিরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন?
পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য এবং সরবরাহ দপ্তরের প্রকাশিত তথ্যে জানানো হয়েছে যে, রাজ্যে সাধারণ নাগরিকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে সমগ্র রাজ্যজুড়ে AAY, PHH, SPHH, RKSY-I, RKSY-II এই পাঁচ ধরনের খাদ্য সাথী কার্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই ৫ ধরনের রেশন কার্ডের আওতাধীন ব্যাক্তিরা চাল, গম, আটা সহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য স্বল্পমূল্যে কিংবা বিনামূল্যে পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে AAY কার্ডের অধীনস্ত প্রতিটি পরিবার প্রতি মাসে ২১ কেজি চাল এবং ১৩ কেজি ৩০০ গ্রাম আটা অথবা ১৪ কেজি গম সম্পূর্ণ বিনামূল্য পেয়ে থাকেন। আবার PHH রেশন কার্ডের আওতাভুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতি মাসে ৩ কেজি করে চাল এবং ১ কেজি ৯০০ গ্রাম করে আটা অথবা ২ কেজি গম পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে, SPHH কার্ডের আওতাধীন ব্যক্তিরাও প্রতি মাসে ৩ কেজি করে চাল এবং ১ কেজি ৯০০ গ্রাম করে আটা অথবা ২ কেজি গম পেয়ে থাকেন। এছাড়াও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার অন্তর্ভুক্ত কার্ড RKSY -I এবং RKSY – II -এর অধীনে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ যথাক্রমে ২ কেজি করে চাল ও ৩ কেজি করে গম এবং ১ কেজি করে চাল ও ১ কেজি করে গম পেয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:- মাত্র কয়েক মিনিটেই প্রাথমিক টেটের সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিন। জেনে নিন পদ্ধতি।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্তকরণের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা কি কি?
১. খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী নাগরিকরা এই খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
২. পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র, অসহায় সাধারণ জনগণ এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এছাড়াও যেসমস্ত সাধারণ মানুষ বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারাও এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম করতে পারবেন। তবে শুধুমাত্র BPL তালিকাভুক্ত সাধারণ জনগণ নয় পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী APL তালিকাভুক্ত সাধারণ মানুষও এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
৩. যে সমস্ত পরিবারের কোনো সদস্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার অথবা কেন্দ্র সরকারের অধীনে কর্মরত তারা কোনোভাবেই খাদ্য সাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না।
৪. খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যক্তির নিজস্ব রেশন কার্ড থাকা আবশ্যক।
খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করবেন কিভাবে?
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী সাধারণ জনগণ দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমেই খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে খাদ্য এবং সরবরাহ দপ্তরের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজের পরিবারের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে খাদ্য সাথী প্রকল্পের অধীনে নাম নথিভূক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ফর্মটিতে উল্লেখিত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রকার নথি অ্যাটাচ করে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে জমা করার মাধ্যমে আপনি এই প্রকল্পের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. আবেদনকারীর পরিবারের ঠিকানার প্রমাণ পত্র।
২. পরিবারের কোনো সদস্যের বয়স যদি পাঁচ বছরের কম হয় তবে তার জন্ম সার্টিফিকেট।
৩. আবেদনকারী ব্যক্তিদের আধার কার্ড।
৪. আবেদনকারী ব্যক্তির পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণ পত্র।
৫. আবেদনকারীর পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
৬. আবেদনকারী ব্যক্তির বিপিএল কার্ড।
৭. বৈধ মোবাইল নম্বর।
৮. আবেদনকারী ব্যক্তির রেশন কার্ড।