শুরু করুন মুরগির ফার্মের ব্যবসা এবং মাস গেলে উপার্জন করুন ভাল পরিমাণ টাকা

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমগ্র দেশব্যাপী ডিম এবং মুরগির চাহিদা ক্রমাগত হারে বাড়ছে। ডিম ও মুরগির এই ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এখন আপনিও নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা নিজস্ব মুরগির ফার্মের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রকার তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।

মুরগির ফার্মের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কি রকম জায়গা প্রয়োজন হবে?

মুরগির ফার্মের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার একটু বড় ধরনের খোলামেলা জায়গা প্রয়োজন হবে কিন্তু আপনি চাইলে স্বল্প জায়গাতেও এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। তবে এই ব্যবসাটি শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হল আপনি যে জায়গায় নিজের ফার্ম তৈরি করতে চাইছেন সেখানে যেন অন্য কোন পশুর উপদ্রব না থাকে। এছাড়াও মুরগির ফার্ম করার ক্ষেত্রে আপনি যে জায়গাটি নির্বাচন করবেন সেটি যাতে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন হয় এবং উক্ত জায়গায় যাতে জল ও খাদ্যের সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা যায় তার দিকেও নজর রাখতে হবে। এছাড়াও আপনি যে জায়গায় মুরগির ফার্ম তৈরি করতে চাইছেন সেই জায়গাটিতে মুরগির জন্য নির্দিষ্ট ঘর তৈরি করতে হবে এবং এই ঘরটিতে মুরগির ডিম পাড়ার পাত্র, খাবার জলের পাত্র এবং খাবারের পাত্র রাখতে হবে। বড় করে মুরগির ফার্ম তৈরি করার ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে ৫০০ থেকে ১০০০ টি মুরগির খাঁচা প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি ছোট করে আপনার ব্যবসাটি শুরু করতে চান তবে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে মুরগির খাঁচা নির্মাণ করুন।

কোথা থেকে মুরগি সংগ্রহ করবেন?

মুরগির ফার্ম তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হল, আপনি নিজের ফার্মে যে সমস্ত মুরগিগুলিকে প্রতিপালন করবেন সেগুলি যেন যথেষ্ট উন্নত জাতের হয়। উন্নত জাতের মুরগি কেনার ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটবর্তী ফার্মগুলি থেকে মুরগির বাচ্চা কিনে আনতে পারেন। অথবা আপনার বাড়ির নিকটবর্তী হাট কিংবা লোকাল মার্কেট থেকেও উন্নত জাতের মুরগির বাচ্চা কিনে আনতে পারেন। তবে মুরগি প্রতিপালনের পূর্বে উন্নত জাতের মুরগি সম্পর্কে বেশ খানিকটা খোঁজখবর করে নেবেন কিংবা এ বিষয়ে বেশ খানিকটা পড়াশোনাও করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি গ্রামপ্রিয়া, শ্রীনিধি এবং বনরাজা জাতের মুরগি পালন করতে পারেন। গ্রামপ্রিয়া জাতের মুরগি থেকে ডিম ও মাংস উভয়ই পাওয়া যায়, এমনকি এই মুরগিগুলি এক বছরে ২১০ থেকে ২২৫ টি ডিম পাড়তে পারে যা আপনার ব্যবসার পক্ষে অত্যন্ত লাভজনক হবে। বনরাজা জাতের মুরগি প্রতিবছরে ১২০ টা থেকে শুরু করে ১৪০ টা ডিম পাড়তে পারে। আবার শ্রীনিধি জাতের মুরগিও মাংস এবং ডিম উভয় দিয়ে থাকে। সুতরাং এই সমস্ত দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসায় যথেষ্ট উন্নতি করতে পারবেন।

মুরগির জন্য কেমন ধরনের খাবার প্রয়োজন হবে?

প্রতিদিন অধিক পরিমাণে ডিম পাওয়ার জন্য গম/ভুট্টা ভাঙা বা চালের খুদ, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া (তুষ ছাড়া), তিলের খৈল, শুঁটকি মাছের  গুঁড়ো, ঝিনুকের গুঁড়ো সহ অন্যান্য সুষম খাদ্য, বিশুদ্ধ জল এবং সবুজ শাক খেতে দিতে হবে। এছাড়াও ভাত তরকারি ভিটামিন ও খনিজ লবণের মিশ্রণ দিতে হবে। তবে শুধুমাত্র মুরগির খাবারের দিকে খেয়াল দিলেই হবে না, মুরগি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর দিতে হবে। রানীক্ষেত, কলেরা, বসন্ত -এর মত রোগ যাতে না ছড়ায় তার জন্য সরকারের তরফে বিনামূল্যে মুরগিকে টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। আপনার মুরগিগুলিকে এই সমস্ত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এছাড়াও মুরগির উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখুন। কোন মুরগি অসুস্থ হয়ে গেলে দ্রুত পশু চিকিৎসালয় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।

আরও পড়ুন:- আবেদন করুন সক্ষম স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান বার্ষিক ৫০ হাজার টাকার অনুদান।

মুরগি এবং ডিম কিভাবে বিক্রি করবেন?

আপনি আপনার এলাকার নিকটবর্তী বাজারের দোকানগুলিতে মুরগি বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও আপনার এলাকায় যে পাইকারি মার্কেট রয়েছে সেখানেও পাইকারি দরে মুরগি বিক্রি করতে পারবেন। এর পাশাপাশি আপনার এলাকার হাটেও মুরগি বিক্রির একটি যথেষ্ট ভালো সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে আপনার এলাকার মুদিখানা দোকানগুলিতে পাইকারি ডিমের দোকানে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে, এমনকি হাটেও ডিম বিক্রি করতে পারবেন। তবে এখানেই শেষ নয়, উন্নত মানের মুরগির ছোট বাচ্চা বিক্রি করার মাধ্যমেও আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

মুরগির ফার্ম তৈরির ক্ষেত্রে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে?

মুরগির ফার্ম তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে অন্ততপক্ষে ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার বাড়িতে ফার্মটি তৈরি করেন তবে যথেষ্ট কম বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। তবে বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তা করার কারণ নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, বাজারে নকল ডিমের প্রচলন বন্ধ করার জন্য এবং ক্রমবর্ধমান মুরগি ও ডিমের চাহিদাকে পূরণ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে লাইভ স্টক মিশন তৈরি করা হয়েছে, যার আওতায় একজন ব্যক্তিকে মুরগির ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হবে। সুতরাং এই ভর্তুকির মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

মুরগির ব্যবসা থেকে লাভ:-

শীত বা গরম সব সময়ই মুরগি এবং ডিমের চাহিদা রীতিমতো তুঙ্গে থাকে। সুতরাং মুরগির ফার্মের ব্যবসায়ে লোকসানের চিন্তা নেই। সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারলে এই ব্যবসা থেকে আপনি প্রত্যেক মাসে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার ১ মাসের উপার্জনের মাধ্যমে আপনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ টাকা তুলে নিতে পারবেন।

Leave a Comment