সময় যতই এগিয়েছে সমগ্র ভারত তথা বিশ্বজুড়ে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তত বেড়েছে। আর তাতেই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে সারা ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সাথে সাথেই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে স্কুলগুলিতে ক্রমাগত হারে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও বাড়ছে। যদিও সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী কর্মসূচি এবং স্কলারশিপ থেকে শুরু করে প্রকল্প ও যোজনার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তবে সমগ্র দেশজুড়ে শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকদের চাহিদাও বেড়ে, আর তার সাথে বেড়েছে প্রাইভেট টিউশনের চাহিদা। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা এমন এক বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি, যার মাধ্যমে আপনি ন্যূনতম খরচে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।
আজ্ঞে হ্যাঁ, আজ আমরা প্রাইভেট টিউটর রূপে কোচিং সেন্টার শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করতে চলেছি, যার মাধ্যমে আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নিজের পরিবারের জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন। চলুন তবে কোচিং সেন্টার খুলে তা থেকে অর্থ উপার্জন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-
১. কোন বিষয়ে শিক্ষা দান করবেন তা নির্ধারণ করা:-
কোচিং সেন্টার খুলে তার মাধ্যমে শিক্ষাদান করার জন্য আপনি যে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন অথবা যে বিষয়গুলি নিয়ে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে সেই সমস্ত বিষয়গুলি নির্বাচন করে নিন। এক্ষেত্রে নিচু স্তরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে আপনি আর্টস, কমার্স, সাইন্স -এর মত বিভাগগুলি নির্বাচন করতে পারেন অথবা উচ্চস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা, ইংরেজি, অংক, ইতিহাস, বায়োলজি, ভূগোল, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে শুরু করে যেকোনো একটি বিষয় নির্বাচন করে শিক্ষাদান করতে পারেন। তবে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের জ্ঞান এবং পছন্দকে প্রাধান্য দেবেন। যে বিষয়টি আপনি ভালোভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাতে পারবেন এবং যে বিষয়টি পড়ানোর ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে আত্মবিশ্বাসী মনে করবেন সেই বিষয়টি নির্বাচন করাই শ্রেয়। এছাড়াও আপনি চাইলে নানা ধরনের কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার শুরু করতে পারেন।
২. কোচিং সেন্টার খোলার জন্য উপযুক্ত জায়গা:-
কোচিং সেন্টার খোলার জন্যআ পনি এমন জায়গা নির্বাচন করবেন যেখানে খুব সহজেই ছাত্র-ছাত্রীরা পৌঁছাতে পারবে। স্কুলের নিকটবর্তী যেকোনো জায়গা অথবা আপনার নিকটবর্তী লোকাল মার্কেটের কোনো জায়গা কিংবা বাস স্ট্যান্ড অথবা স্টেশনের নিকটবর্তী কোনো জায়গা নির্বাচন করতে পারেন। তবে কোচিং সেন্টার খোলার ক্ষেত্রে আপনি যে জায়গাটি নির্বাচন করবেন সেটি যেন যথেষ্ট বড় হয় এবং ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে সেখানে ভালভাবে বসতে পারে সেই বিষয়টি নজরে রাখবেন। সময়ের সাথে সাথে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়লে বড় ঘরের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে, সুতরাং এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই বড় ঘর নির্বাচন করাই শ্রেয়। তবে আপনার বাড়িতেই যদি যথেষ্ট বড় জায়গা থেকে থাকে, তবে আপনি আপনার বাড়িতেই নিজস্ব কোচিং সেন্টার শুরু করতে পারেন।
আরও পড়ুন:- আবেদন করুন আব্দুল কালাম স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান বার্ষিক ২০,০০০ টাকার অনুদান।
৩. কোচিং সেন্টার খোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র:-
কোচিং সেন্টার খোলার ক্ষেত্রে বোর্ড, লাইট, ফ্যান, পেন, মার্কার, চার্ট, মডেল, প্রজেক্টর প্রয়োজন হবে। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকার বই প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি সাইন্সের বিষয়ে শিক্ষাদান করতে চান তবে মানবদেহের কঙ্কালের কিংবা কঙ্কালের চিত্র, ভৌত বিজ্ঞানের নানা ধরনের যন্ত্রপাতি এবং জ্যামিতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকার উপাদানগুলি প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে আপনি যদি আর্টসের বিষয়ে শিক্ষাদান করতে চান তবে নানা ধরনের ম্যাপ, গ্লোব, ছবি সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়গুলি আপনাকে প্রস্তুত রাখতে হবে। অন্যদিকে আপনি যদি বিষয় ভিত্তিক শিক্ষাদান করে থাকেন তবে উক্ত বিষয়ে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যে আনুষঙ্গিক জিনিসগুলো প্রয়োজন হয়ে থাকে তা অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন।
৪. কোচিং সেন্টারের ফি নির্বাচন এবং প্রচার:-
আপনি কোন বিষয়ের অথবা কোন বিভাগের শিক্ষাদান করছেন তার উপর নির্ভর করে নিজস্ব ফি নির্ধারণ করে নিন। এছাড়াও কোন কোন দিন আপনি ক্লাস রাখতে চাইছেন তারও একটি নির্দিষ্ট টাইম স্লট তৈরি করে নিন। টাইম স্লট এবং ফি নির্ধারণ করা হলে আপনি আপনার নিকটবর্তী এলাকায় পোস্টার, হোডিং -এর মাধ্যমে আপনার কোচিং সেন্টারের প্রচার শুরু করতে পারেন। এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মত নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলির মাধ্যমেও আপনি আপনার কোচিং সেন্টারের প্রচার করতে পারবেন। এর পাশাপাশি প্যাম্পলেট বিতরণ এবং খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমেও আপনি আপনার কোচিং সেন্টারটির প্রচার করতে পারবেন। এভাবে প্রচার শুরু করলেই ছাত্র-ছাত্রীরা আপনার কোচিং সেন্টার সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তবে এক্ষেত্রে যে নম্বরটিতে ছাত্র-ছাত্রীরা আপনাকে যোগাযোগ করবে সেটি যেন সবসময় অন থাকে তার বিষয়ে বিশেষ নজর দেবেন।
৫. কোচিং সেন্টার শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ:-
কোচিং সেন্টার শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার বিশেষ বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না, এক্ষেত্রে আপনার মেধাটাই মূল। আপনি যদি আপনার বাড়িতে কোচিং সেন্টার খুলতে চান তবে লাইট, ফ্যান, বই সহ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসগুলি কেনার ক্ষেত্রে আপনার যে টাকা খরচ হবে তা ছাড়া আলাদা করে কোন খরচ নেই। তবে আপনি যদি নির্দিষ্ট জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়ে তারপর নিজস্ব কোচিং সেন্টারটি শুরু করতে চান তবে ঘর ভাড়া সহ কোচিং সেন্টার শুরু করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত জিনিস গুলি প্রয়োজন হবে তা কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ৫০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
৬. কোচিং সেন্টার থেকে উপার্জন:-
কোচিং সেন্টার থেকে আপনি কত টাকা উপার্জন করছেন তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে আপনার ছাত্রসংখ্যা এবং আপনি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কত টাকা ফি নিচ্ছেন তার উপরে। যদিও এক্ষেত্রে একটি হিসেব অনুসারে বলা যায় যে, আপনার যদি ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর থাকে এবং আপনি প্রত্যেকের থেকে ৫০০ টাকা বেতন নিয়ে থাকেন তবে আপনি প্রত্যেক মাসে ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন। যদিও টাকার অংক আপনার ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা এবং বেতন অনুসারে বাড়তে বা কমতে পারে।