নিজস্ব মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করে প্রতিমাসে উপার্জন করুন ৫০,০০০ টাকা।

বিগত বছরগুলিতে করোনা মহামারীর কারণে সমগ্র ভারত জুড়ে যে টানা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল তারপর থেকেই সমগ্র ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের যুবক-যুবতীরা নিজস্ব ব্যবসা তৈরির পাশাপাশি ওয়ার্ক ফ্রম হোমের দিকে আরও বেশি করে ঝুঁকেছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুবক-যুবতীদের ব্যবসা শুরু করার সময় প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধনের অভাব। আর মূলধনের অভাবের কারণে মূল যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হল, স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে কোন ব্যবসাগুলি শুরু করা যেতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় যে, এমন বেশ কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলি শুরু করার ক্ষেত্রে স্বল্প মূলধন এবং আপনার বিশেষ কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর আজকের এই পোস্টে আমরা এমনই একটি ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি, যেটি আপনারা নিজের বাড়িতে বসেই যথেষ্ট কম মূলধন বিনিয়োগ করার মাধ্যমে শুরু করতে পারবেন। এই ব্যবসাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:-

সময় যতই এগিয়েছে ডিজিটালাইজেশনের সাথে সাথে মোবাইল এবং ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে শিশু থেকে কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এমনকি বয়সপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এমনকি কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রকার তথ্য এবং নথিও সাধারণ মানুষের মোবাইলে সংরক্ষিত থাকে। যার ফলে মোবাইলের চাহিদাও ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলত, কোনোভাবে যদি মোবাইল খারাপ হয়ে যায় তবে ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না। আর মানুষের এই সমস্যাকে সমাধান করার মাধ্যমে আপনি নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, এখন আপনি মোবাইল রিপেয়ারিং -এর কাজ শেখার মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তুলে পারবেন এবং এই ব্যবসা থেকে প্রতিমাসে অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন।

মোবাইল রিপেয়ারিং – ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার কি কি প্রয়োজন হতে চলেছে?

মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে মোবাইলের সমস্ত রকম পার্টস সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকা দরকার, না হলে আপনি কোনোভাবেই নিজস্ব মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন না। মোবাইল রিপেয়ারিং এবং মোবাইলের বিভিন্ন পার্ট সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান লাভের জন্য আপনি মোবাইল রিপেয়ারিং সম্পর্কিত যেকোনো কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মোবাইল সংক্রান্ত নানা ধরনের কোর্স করানো হয়ে থাকে। এই সমস্ত কোর্সের মধ্যে থেকে আপনারা নিজের পছন্দ অনুসারে কোর্স নির্বাচন করে মোবাইলের বিভিন্ন পার্টস এবং মোবাইল রিপেয়ারিং সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। তবে এখানেই শেষ নয়, এর পাশাপাশি এই সমস্ত কোর্সের মাধ্যমে আপনারা হাতে কলমে মোবাইলের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা সমাধানের সুযোগও পাবেন। সুতরাং এই সমস্ত কোর্সের মাধ্যমে আপনারা বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে মোবাইল রিপেয়ারিং সংক্রান্ত নানা ধরনের কাজ শেখার সুযোগও রয়েছে।

তবে শুধুমাত্র কোর্স কমপ্লিট করলেই হবে না। নিজস্ব মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি দোকান নিতে হবে। দোকান তৈরি করার ক্ষেত্রে, আপনি যে জায়গায় দোকানটি তৈরি করছেন বা ভাড়া নিচ্ছেন সেখানে যেন প্রত্যেকদিন প্রচুর লোকের যাতায়াত আছে কিনা সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এছাড়াও আপনার দোকানে যাতে সাধারণ মানুষ কোন সমস্যা ছাড়াই পৌঁছাতে পারে তার দিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে যদি আপনার বাড়ির কাছেই যথেষ্ট লোক সমাগম হয়ে থাকে তবে আপনি নিজের বাড়িতেই নিজস্ব দোকান তৈরি করতে পারবে, অন্যথায় আপনাকে আপনার নিকটবর্তী মার্কেটে দোকান ভাড়া নিতে হবে। বাড়িতে কিংবা মার্কেটে যেখানেই দোকান তৈরি করুন না কেন আপনার দোকানের আশেপাশে যেন অন্য কোন মোবাইল রিপেয়ারিং -এর দোকান না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন।

আরও পড়ুন:- HDFC স্কলারশিপে আবেদন আবেদন করুন আর পেয়ে যান বার্ষিক ৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃত্তি।

দোকান ঘর ছাড়াও মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে মোবাইল রিপেয়ারিং -এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা ধরনের যন্ত্রপাতিও প্রয়োজন হবে। এছাড়াও মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে মোবাইলের নানা ধরনের ছোট ছোট পার্টস প্রয়োজন হতে চলেছে। এই সমস্ত পার্টসগুলির মধ্যে চার্জার, কভার, স্ক্রীনগার্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উদ্যোগীদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, মোবাইল রিপেয়ারিং এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং মোবাইলের পার্টস আপনি আপনার এলাকার লোকাল মার্কেটে পেয়ে যেতে পারেন এছাড়াও আপনার নিকটবর্তী এলাকার যেকোনো নামিদামি পাইকারি মার্কেট থেকেও আপনি এই সমস্ত যন্ত্রপাতি ও মোবাইলের পার্টস গুলি পেয়ে যাবেন।

মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?

মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে আপনার পছন্দমাফিক জায়গায় নিজের দোকানটি তৈরি করে নিতে হবে। এরপর কাঁচের শোকেস, কাঠের তাক সহকারে দোকানটিকে ভালোভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও লাইট, মিউজিক সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি আপনার দোকানটিকে সাজিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার দোকানের সামনে একটি বড় হোর্ডিং লাগাতে পারেন। এই হোর্ডিংয়ে আপনার দোকানের নাম, ঠিকানা এবং আপনার দোকান থেকে কি কি পরিষেবা পাওয়া যায় তা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য লিখতে হবে। তাহলে এই হোর্ডিং -এর মাধ্যমে আপনি সাধারণ জনগণকে আকর্ষণ করতে পারবেন। এছাড়াও দোকানের প্রচারের জন্য মাইকিং, পোস্টার এবং Facebook, Whatsapp, Instagram -এর মত অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করতে পারেন। ধীরে ধীরে আপনার ব্যবসাটি চলতে শুরু করলে আপনি মোবাইলের নানা ধরনের ছোটখাটো পার্টস বিক্রি করার ব্যবসাও শুরু করতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার দোকান থেকে মোবাইলের ব্যাটারি, ফোনের চার্জার, কভার, নানা ধরনের হেডফোন সহ অন্যান্য জিনিসগুলি বিক্রি করার মাধ্যমেও যথেষ্ট টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কত টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে?

আপনি যদি নিজের বাড়িতে ছোট করে মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনার ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে। তবে অনেকেই বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তায় থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, যুবক-যুবতীদের ব্যবসায় উৎসাহ প্রদানের জন্য রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নানা ধরনের প্রকল্প এবং যোজনা কার্যকর করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। সুতরাং বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তায় কোনো প্রয়োজন নেই।

মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসায় লাভ:-

মোবাইল রিপেয়ারিং -এর ব্যবসা থেকে আপনি ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন। ধীরে ধীরে আপনার দোকানটি আপনার এলাকায় জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করলে আপনি আপনার এই ব্যবসা থেকে প্রত্যেক মাসে অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন। এছাড়াও মোবাইলের বিভিন্ন প্রকার পার্টস বিক্রি করার মাধ্যমে এবং হেডফোন, চার্জার, ব্যাটারির মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলি বিক্রি করার মাধ্যমেও আপনি অতিরিক্ত টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন।

Leave a Comment