কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে চান? জেনে নিন কোন কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন।

বর্তমানে সময়ে সমগ্র ভারত সহ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের কাছে যে সমস্ত বিষয়গুলি ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো নিত্য নতুন জামা কাপড়ের কালেকশন। আজ্ঞে হ্যাঁ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকে শুরু করে Flipkart, Amazon, Myntra, Meesho -এর মত অনলাইন শপিং অ্যাপগুলির কারণে সাধারণ মানুষ তাদের জামা কাপড়ের কালেকশন এবং নানা ধরনের ফ্যাশন ব্রান্ড নিয়ে যথেষ্ট বেশি সচেতন হয়েছেন। আর এই কারণে সমগ্র ভারত জুড়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের বিভিন্ন ধরনের পোশাকের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে ভারতের বহু যুবক-যুবতী নিজস্ব কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহী।

কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:-

কাপড়ের দোকানের জন্য জায়গা নির্ধারণ:- কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো আপনার কাপড়ের দোকানটি কোথায় তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে প্রতিদিন কত লোক সমাগম হয় তার উপরে আপনার দোকান থেকে কি পরিমাণ কাপড় বিক্রি হবে তা নির্ভর করে। আর তাই আপনার নিজস্ব কাপড়ের দোকান তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনাকে এমন একটি জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে প্রত্যেকদিন প্রচুর সংখ্যক মানুষের আনাগোনা হয়ে থাকে। আপনার কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনি আপনার এলাকার লোকাল মার্কেটে দোকান নিতে পারেন, তবে আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি প্রত্যেকদিন প্রচুর লোক সমাগম হয়ে থাকে তাহলে আপনি আপনার বাড়িতেই নিজস্ব কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা:- আপনি যদি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাকেন তবে আপনি কাপড় সাপ্লাইয়ের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার আলাদা করে কোনোরূপ দোকানের প্রয়োজন হবে না। আপনি কলকাতা, দিল্লি, গুজরাট, মুম্বাই থেকে বিভিন্ন সুপরিচিত ব্র্যান্ডের জামা কাপড় এনে নিজের এলাকার দোকানগুলিতে সাপ্লাই দেওয়ার মাধ্যমে নিজের কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এছাড়াও আপনার আশেপাশের এলাকা গুলিতে থাকা বিভিন্ন পাইকারি মার্কেট থেকে পাইকারি দরে কাপড় কিনে আপনার এলাকার কাপড়ের দোকানগুলিতে তা বিক্রি করতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে আগে থেকে আপনার এলাকার কাপড়ের দোকানগুলির সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে এবং তারা কি ধরনের জামা কাপড় কি পরিমাণে চায় তা সম্পর্কেও জানতে হবে। পাইকারি দরে কাপড় সাপ্লাই দেওয়ার পাশাপাশি আপনি নিত্য নতুন ডিজাইনের গজ কাপড়ের কালেকশনও রাখতে পারেন। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ রেডিমেড জামা কাপড় কিনলেও বহু সংখ্যক মানুষ এখনো পর্যন্ত নিত্য নতুন ডিজাইনের গজ কাপড় কিনে নিজের পছন্দ সই ডিজাইনের কুর্তি, চুরিদার, লং স্কার্ট, ঘাঘরা, লেহেঙ্গা, এমনকি শাড়িও তৈরি করে নিতে পছন্দ করেন। সুতরাং জামা কাপড়ের পাশাপাশি গজ কাপড়ের কালেকশনের মাধ্যমেও আপনি নিজস্ব ব্যবসা থেকে যথেষ্ট আয় করে নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন:- প্রিয়ংবদা বিড়লা স্কলারশিপে আবেদন করলেই পাওয়া যাবে বছরে ৯৬ হাজার টাকা। বিস্তারিত জেনে নিন।

রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসা:- রেডিমেড জামা কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে নিজস্ব একটি দোকান নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার দোকানে নিত্য নতুন ডিজাইনের কুর্তি, চুরিদার, জিন্স, শার্ট, টপ, টি শার্ট, মিনি স্কার্ট, লং স্কার্ট, জামা, ধুতি, শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি, শাড়ি সহ বিভিন্ন ঋতুতে পড়ার উপযোগী জামা কাপড়ের কালেকশন রাখতে হবে। অর্থাৎ আপনার দোকানে আপনাকে গ্রীষ্ম থেকে শুরু করে শীতে পরার উপযোগী জামা কাপড় রাখতে হবে। এছাড়াও শিশু থেকে বয়স্ক প্রত্যেকের ক্ষেত্রে যে সমস্ত জামা কাপড়গুলি প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয়ে থাকে তারও কালেকশন রাখতে হবে। নিজস্ব কাপড়ে দোকান তৈরি করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো, গ্রাহক যেন কোনোমতেই আপনার দোকান থেকে ফিরে না যায়।

নিজস্ব কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে আপনার দোকানের জন্য একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে। এই নামের মাধ্যমেই আপনাকে এবং আপনার দোকানকে সবাই চিনবে। সুতরাং চিরাচরিত নামের থেকে আলাদা ধরনের নাম রাখার চেষ্টা করবেন। পরবর্তীতে হোডিং এবং লাইটের সাহায্যে আপনার দোকানটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। হাল ফ্যাশনের বিভিন্ন প্রকার জামা কাপড় আপনার দোকানের শো কেসের সাজিয়ে রাখতে হবে, এতে মানুষ আপনার দোকানের প্রতি আকৃষ্ট হবে। এছাড়াও আপনার দোকানের আশেপাশে এলাকাগুলিতে এবং আপনার নিকটবর্তী এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলগুলিতে পোস্টার এবং হোডিং -এর মাধ্যমে আপনার দোকান সম্পর্কে প্রচার করতে পারেন, এর ফলে আপনার দোকানে ভিড় বাড়বে। এছাড়াও দুর্গাপুজো, ঈদ, দীপাবলি, ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার, নববর্ষ উপলক্ষে আপনার দোকানে নানা ধরনের অফার, ভাউচার লঞ্চ করতে পারেন, যা গ্রাহককে আকৃষ্ট করবে।

এছাড়াও Flipkart, Amazon, Myntra, Meesho -এর মত অনলাইন শপিং অ্যাপগুলির মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসাকে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে সারা ভারতের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারবেন। এছাড়াও Whatsapp, Facebook, Instagram এর মত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির মাধ্যমে আপনি নিজের ব্যবসা বাড়াতে পারবেন। তবে অনলাইনের মাধ্যমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই একটি নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিস ঠিক করতে হবে, যারা মানুষের কাছে তাদের অর্ডার অনুসারে জামা কাপড় সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে দেবে।

কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ:-

আপনি যদি পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনার সর্বোচ্চ ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনি কত পরিমাণ জামা কাপড় কিনছেন তার উপরে বিনিয়োগের পরিমাণ অনেকাংশই নির্ভর করবে। অন্যদিকে আপনি যদি নিজের কাপড়ের দোকান খোলার মাধ্যমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনার ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনার ব্যবসায় কত টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে তা নির্ভর করবে আপনি কোন জায়গায় দোকান ভাড়া নিচ্ছেন, কিভাবে দোকানটিকে সাজাচ্ছেন, কি পরিমাণ জামা কাপড় কিনছেন তার উপরে।

কাপড়ের ব্যবসা থেকে লাভ:-

আপনি যদি সঠিকভাবে নিজের ব্যবসাটিকে পরিচালনা করতে পারেন তবে প্রত্যেক মাসে আপনি আপনার ব্যবসা থেকে ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১লাখ টাকা পর্যন্ত তুলে নিতে পারবেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন না। আপনার ক্ষেত্রেও যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আপনি যদি আপনার ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন এবং গ্রাহককে সন্তুষ্ট রাখতে পারেন তবে আপনি প্রত্যেক মাসে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন।

Leave a Comment