করোনা মহামারী চলাকালীন সমগ্র দেশের জনস্বাস্থ্য বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি সারা ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাও যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। আর তা থেকে কোনোভাবেই বাদ যায়নি পশ্চিমবঙ্গের নামও। এমতাবস্থায় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে কোনোরকম সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিভিন্ন রাজ্যগুলির রাজ্য সরকারের তরফে অনলাইনের মাধ্যমে পঠন-পাঠনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়েছিল। সমগ্র দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও অনলাইনের মাধ্যমে গঠন-পাঠনের প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল। আর এখানেই মূল সমস্যার সূত্রপাত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ জনগণের আর্থিক অসহায়তার কারণে সমস্ত ক্ষেত্রের ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইনে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত স্মার্ট ফোন কিংবা ল্যাপটপ অথবা ট্যাব কিনতে পারেননি। যার কারণে তারা অন্যদের তুলনায় পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়ছিলেন। আর এই সমস্যা সমাধান করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এক বিশেষ প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছিল।
রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই প্রকল্পটি বর্তমানে সমগ্র রাজ্যজুড়ে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প নামে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। করোনা মহামারী চলাকালীন রাজ্যের আর্থিকভাবে অসহায় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইনের মারফত পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মোবাইল কিংবা ট্যাব কেনার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প কার্যকর করা হলেও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যার্থে এই প্রকল্প চালু রাখা হয়েছে।
কারা তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?
১. পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী নির্দেশিকা অনুসারে, সমস্ত রাজ্যের সরকারি, সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলগুলিতে দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরাই কেবলমাত্র তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে স্বীকৃত যেকোনো মাদ্রাসার অধীনে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরাও এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাবেন বলেই জানানো হয়েছে।
২. পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় আরো জানানো হয়েছে যে, কেবলমাত্র অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।
৩. তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ টাকা বা তার তুলনায় কম হতে হবে।
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল কিংবা ট্যাব কেনার জন্য ১০,০০০ টাকা করে অনুদান পাবেন। তবে এক্ষেত্রে মোবাইল কিংবা ট্যাব কেনার পর ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব বিদ্যালয়ে মোবাইল কিংবা ট্যাব কেনার রশিদ জমা করতে হবে।
আরও পড়ুন:- দুয়ারে সরকারে আবেদন জানানো প্রকল্পের স্ট্যাটাস দেখবেন কি করে? জেনে নিন।
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় কিভাবে আবেদন জানাবেন?
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাওয়ার জন্য একজন ছাত্র অথবা ছাত্রীকে তিনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত তার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর নির্ধারিত সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে উক্ত ছাত্র বা ছাত্রীকে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের ফর্ম প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে আবেদনকারী শিক্ষার্থীকে উক্ত ফর্মের সমস্ত তথ্য নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর ফর্মটিকে নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে জমা করলেই উক্ত ছাত্র বা ছাত্রীর তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানো সম্পূর্ণ হবে। তবে এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি যে, ফর্মে যে সমস্ত তথ্য প্রদান করা হচ্ছে তাতে কোন প্রকার ভুল থাকলে ওই ফর্ম কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না। এমনকি ফর্মের তথ্যের সাথে আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রী যে নথি বা ডকুমেন্ট দিচ্ছেন তারও যদি কোনোপ্রকার মিল না থাকে তাহলেও তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানানো সম্ভব নয়। সুতরাং আপনিও যদি তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তবে আবেদনপত্রটি নির্ভুলভাবে পূরণ করবেন এবং সমস্ত ডকুমেন্টগুলি সঠিকভাবে অ্যাটাচ করবেন। যেহেতু রাজ্য সরকারের তরফে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের অনুদান সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে, সুতরাং কোনো তথ্য কিংবা নথিতে ভুল থেকে গেলে কোনভাবেই এই প্রকল্পের আওতায় অনুদান পাওয়া সম্ভব হবে না।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি:-
১. আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ।
২. আবেদনকারী শিক্ষার্থীর ব্যাংকের পাস বইয়ের প্রথম পাতার জেরক্স কপি।
৩. আবেদনকারীর আধার কার্ড।
৪. বাংলার শিক্ষা আইডি।
মূলত অর্থনৈতিকভাবে অসহায় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল। ইতিপূর্বে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় স্মার্টফোন কিংবা ট্যাব কেনার সুবিধা পেয়েছেন। যার কারণেই আগামী দিনে কবে এই প্রকল্পের টাকা পাওয়া যাবে তা জানতে রীতিমতো উৎসুক হয়ে উঠেছেন সমগ্র রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা আগামী দিনে কবে এই প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন তা সংক্রান্ত কোনো তথ্য এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে অফিসিয়াল ভাবে জানানো হয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যান্য প্রকল্পগুলির মতো এই প্রকল্পটিও সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণের থেকে বিশেষ প্রশংসা লাভ করেছে। এমনকি রাজনৈতিক মহলে কর্মকর্তাদের কাছে এই প্রকল্প বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।