ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন বলতে এমন এক বিশেষ ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়ে থাকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বসবাসকারী নাগরিকরা তাদের আয়ের বেশ কিছু অংশ আয়কর বিভাগের মাধ্যমে সরকারকে ফেরত দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দেশের সরকারের তরফে নির্ধারিত আয়ের সীমা রয়েছে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা সরকারের তরফে নির্ধারিত আয়ের তুলনায় বেশি টাকা আয় করে থাকেন তাদের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তবে অনেকেই মনে করেন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করা লোকসান বই আর কিছু নয়। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, ভারতে বসবাসকারী যে সমস্ত নাগরিকরা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করে থাকেন তারা বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর আজ আমরা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করার সুবিধা সম্পর্কিত সমস্ত প্রকার তথ্য নিয়েই হাজির হয়েছি।
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করার সুবিধাগুলি কি কি?
১. লোন এবং ভিসার অনুমোদন:-
হোম লোন হোক বা গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লোন অথবা যেকোনো পার্সোনাল লোন সমস্ত ক্ষেত্রে লোন গ্রহণের ক্ষেত্রে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সংক্রান্ত নথিগুলি অবশ্য প্রয়োজনীয়। মূলত গাড়ি, বাড়ি অথবা পার্সোনাল লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে বিগত তিন বছরের ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত নথি দাখিল করতে হয়। এছাড়াও ভিসা এবং পাসপোর্ট -এর জন্য আবেদন জানানোর ক্ষেত্রেও ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন -এর নথি প্রয়োজন হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইলকে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। ITR যেহেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাগরিক কর্তব্যের প্রতীক, তাই ভিসা ও পাসপোর্ট এর অনুমোদন পাওয়ায় ক্ষেত্রে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সংক্রান্ত নথির গুরুত্ব অসীম।
২. প্রামাণ্য নথি:-
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সংক্রান্ত নথি যেকোনো সরকারি কাজের ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রামাণ্য নথি হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি সরকারি নথি হওয়ায় যেকোনো ব্যক্তির পরিচয়পত্র এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আধার কার্ডের জন্য আবেদন থেকে শুরু করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, স্কলারশিপ কিংবা অন্যান্য সরকারি নথির জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত নথিকে প্রামাণ্য নথি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. আয়ের প্রমাণপত্র:-
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সংক্রান্ত নথি একটি সরকারি নথি হওয়ায় এটি বিভিন্ন প্রকার সরকারি কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত নথিতে একজন ব্যক্তির আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য উল্লিখিত থাকায় উক্ত ব্যক্তি এটিকে তার আয়ের প্রমাণপত্র হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। যেকোনো ধরনের সম্পত্তি কেনা বেচা কিংবা বৃহৎ আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সংক্রান্ত নথি ব্যবহার করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:- ১০ বছর অন্তর আধার কার্ড আপডেট বাধ্যতামূলক কেন? জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ আপডেট।
৪. করের ক্ষেত্রে ছাড়:-
ভারতীয় ডাক বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাংকের তরফে যে সমস্ত সঞ্চয় প্রকল্পগুলি কার্যকরী করা হয়েছে সেই সমস্ত সঞ্চয় প্রকল্পের আওতায় এককালীন টাকা ফেরত পাওয়া গেলে সেই টাকার উপরেও কর আরোপ করা হয়ে থাকে। তবে ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করলে এই করের ক্ষেত্রেও ছাড় পাওয়া যায়। মূলত আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তিদের উপর থেকে করের বোঝা কমানোর ক্ষেত্রে এবং আয়কর প্রদানে উৎসাহী করার জন্য আয়কর দপ্তরের তরফে এই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৫. ফেরত মিলবে TDS:-
একটি আর্থিক বছরে একজন ব্যক্তি যত টাকা TDS প্রদান করে থাকেন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করলে তিনি TDS -এর সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবেন।
৬. কালো টাকা বন্ধ করার ক্ষেত্রে:-
বহু মানুষের রয়েছে যারা ব্যবসা কিংবা নিজের চাকরির মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে প্রচুর টাকা উপার্জন করে থাকে। এই টাকা যাতে কোনভাবেই কালো টাকার আওতাভুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ইনকাম ট্যাক্স ফাইল করা আবশ্যক। নতুবা আপনার চাকরি বা ব্যবসার মাধ্যমে কষ্ট উপার্জিত টাকা কালো টাকার আওতাভুক্ত হয়ে যেতে পারে।